রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
গত বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আকাশজুড়ে মেঘ গোমড়া মুখে বসে ছিল। তারপরও বর্ণাঢ্য আয়োজনের কমতি ছিল না। দিনভর নানা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়েছিল। আর সেই উদযাপনের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নিয়েছিলেন। এমন খুশির দিনে কে-ই বা ঘরে থাকতে চায়? তবে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করোনার সংকটকালের কাছে থমকে গেছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ রয়েছে। দেশে দিনে দিনে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি সময় পার করছেন। যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনের সৌন্দর্য আজ তারাই করোনাভাইরাসের অনিশ্চিত আতঙ্কে রয়েছেন। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ কিংবা কমতি নেই। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি ও লোগো ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি শেয়ার করছেন এবং শুভ কামনা জানিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। সময়ের পরিক্রমায় ৬৭ বছর পাড়ি দিয়ে মতিহারের সবুজ চত্বর নামে খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৬৮ বছরে পদার্পণ করছে আজ। দীর্ঘ পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছে।
দিনে দিনে পাঠদান ও গবেষণায় এই বিদ্যাপীঠ সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি দেশের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থার সংকট রয়েছে। এ সংকট নিরসনে নতুন দুটি আবাসিক হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। রাজশাহীতে এ সময় স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। পরে ১৯৬৪ সালের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়। এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়।
বর্তমানে ১২টি অনুষদ ও ৫৮টি বিভাগের অধীনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভাগগুলোর বিভিন্ন বর্ষে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩০০ জন এবং বিদেশি শিক্ষার্থী ৫৮ জন। বতর্মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ১১৭৭ জন (শিক্ষা ছুটিতে ২৯ জন), অফিসার ৭৬৬ জন, সহায়ক কর্মচারী ৭১৪ জন, সাধারণ কর্মচারী ১২২৯ জন এবং শিক্ষার্থী ৩৮,৩০০ জন ও বিদেশি শিক্ষার্থী ৫৮ জন। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে ছাত্রদের জন্য ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য ৬টি আবাসিক হল রয়েছে। গত ৬৭ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই হাজার ৬৫০ জন শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৯৪৬ জনকে পিএইচডি এবং ৭০৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের প্রতিটি জাতীয় আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক, পাঁচজন সহায়ক কর্মচারী, ১০ জন সাধারণ কর্মচারী ও নয়জন ছাত্র শহীদ হন। এছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অজ্ঞাত আরও অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন।