আরিফুল ইসলাম:
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট। সেদিন ভোর রাতে আকাশ ঢেকে গিয়েছিল কালো মেঘে চারদিক নীরব,নিস্তব্ধ। ঠিক সেই সময় একদল কুচক্রী, বিশ্বাসঘাতক,হায়েনার দল প্রবেশ করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। ভারি অস্ত্র -শস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেছিল বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারের উপর। ওরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এই বাংলা মায়ের সাথে, এই বাংলা মায়ের সন্তান, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার সাথে। শত্রুর সাথে হাত মিলিয়েছিল এদেশেরই কিছু ক্ষমতালোভী,স্বার্থান্বেষী, মানবতা হীন, স্বাধীনতা বিরোধী একটি কুচক্রী মহল।
সেই দিন রাতে ৩২ নম্বর বাড়িতে নেমে আসে ভয়ংকর এক কালোরাত্রি। নরপশুর দল সেদিন সেখানে রক্তের হলি খেলায় মেতে ওঠে। ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত মানুষগুলোর উপর। আমাদের স্বাধীন বাংলার স্থপতি, মুক্তিযুূ্দ্ধের অবিসংবাদিত নেতা,স্বাধীনতার ঘোষক,
গরিবদুঃখী-মেহনতী মানুষের বন্ধু যার গানের কম্পনে কেঁপেছে বিশ্ব দুয়ার। যার আঙ্গুলের ব্যক্তিত্বে মেতেছিল বাংলার মুক্তিকামী জনতা। সেই আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের উপর। নারী, শিশু, অন্তঃসত্তা পঙ্গু ব্যক্তিকেও রেহাই দেয়নি পাপিষ্ঠ, অভিশপ্ত ঘাতকেরা। ওরা নির্মম, বর্বর নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায় যা বিশ্বের নজিরবিহীন মর্মান্তিক, জঘন্যতম ঘটনা।
বেদনাবিধুর কালোরাত ছিল সেদিন আকাশে-বাতাসে ভাসতে থাকে কালো ধোঁয়া আর গোলাবারুদের গন্ধ। ওরা এতটাই পাষাণ, এতটাই নিষ্ঠুর যে ওরা বঙ্গবন্ধুর ১০ বছর বয়সী সেই ছোট্ট শিশু রাসেলের অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বাঁচার জন্য কতই না আকুতি- মিনতি আহাজারি-আর্তচিৎকার, “আমি মায়ের কাছে যাবো আমি হাসু আপুর কাছে যাবো সেখানে আমাকে পাঠিয়ে দাও।” তারপরেও পাষণ্ড ঘাতক মাজেদের হৃদয় গলেনি ওরা রেহাই দেয়নি সেদিন রাসেলকেও। ওদের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডগুলো বিশ্বকে সেদিন হতবাক করে দিয়েছিল স্তম্বিত হয়েছিল। ওরা সেদিন বাংলার মানুষদের করেছে পিতৃহীন। ভাগ্যক্রমে সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বেঁচে যায় দেশের বাহিরে ছিল বলে।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর যে বিজয় অর্জন করেছিল, বাংলার মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখেছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাদের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়, ১৫ আগস্ট যেন তাদের সেই বাঁচার স্বপ্ন, তাদের সেই স্বাধীনতাকেই আবার কেঁড়ে নেয়। সেদিন থেকে আজ অবধি এদেশ যেন পরাধীনই রয়ে গেছে। আজও মানুষ অত্যাচারিত,শোষিত হচ্ছে ওদেরই উত্তরসূরীদের হাতে।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট ওরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি,হত্যা করেছে এই বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভরসা আর বাঁচার স্বপ্নকে। হত্যা করেছে এই বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে।হত্যা করেছে এই বাংলার অভিভাবক, পথপ্রদর্শক, স্বপ্নদ্রষ্টাকে।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে নির্ভরতার প্রিয় মানুষটিকে। বাঙালি তাঁকে স্মরণ করে গভীর মনোবেদনায়। আবার জ্বলেও ওঠে অদম্য সাহসে।