পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনা জেলা শহরের দিলালপুর মহল্লার একটি বাড়ি থেকে আজ শুক্রবার দুপুরে মা–বাবা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দ্বিতল বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ তিনটি পড়ে ছিল। পচা দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জব্বার (৬০), তাঁর স্ত্রী ছুম্মা খাতুন (৫০) ও মেয়ে সানজিদা খাতুন (১৩)। সানজিদা পাবনার একটি বেসরকারি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পুলিশের ধারণা, দুই থেকে তিন দিন আগে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। ডাকাত দল বাড়ির মালামাল লুটের জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।
স্থানীয় লোকজন, নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আবদুল জব্বারের গ্রামের বাড়ি জেলার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর ইউনিয়নের পাইকারহাট গ্রামে। তিনি অবসর গ্রহণের পর দোতলা বাড়িটির নিচতলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে তাঁরা বাড়ি থেকে তেমন বের হচ্ছিলেন না। বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়ির বাইরে তাঁদের খুব কম দেখা গেছে। গত তিন চার দিন তাঁদের একবারও বাড়ির বাইরে দেখা যায়নি। করোনার সময় ওই বাড়িতে অন্য কোনো পরিবার ছিল না। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে বাড়িটি থেকে পচা দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। দুপুরের দিকে দুর্গন্ধ তীব্র হতে শুরু করলে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেন। বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ গিয়ে বাড়ির একটি কক্ষে রক্তাক্ত ও অর্ধগলিত অবস্থায় তিনজনের লাশ পায়। বাড়ির দরজা বাইরে থেকে লাগানো ছিল।
আজ শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে সরেজমিন বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে জেলা শহরে ঢুকতে প্রধান সড়কেই দ্বিতল বাড়িটি। একদিকে ফায়ার, স্টেশন অন্যদিকে অফিসার্স ক্লাব। উঁচু দেয়ালে ঘেরা বাড়িটি। পুলিশ ঘিরে রেখেছে চারপাশ। রাস্তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে দুর্গন্ধের তীব্রতা। ভেতরে উঁকি দিতেই চোখে পড়ে বীভৎসতা। বিছানায় তখনো ঝুলছে মশারি। এলোমেলো পড়ে আছে লাশগুলো।
নিহত আবদুল জব্বারের বোন নাজমা খাতুন জানান, তাঁর ভাই এক বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। নিঃসন্তান দম্পতি মেয়েটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। মেয়ের পড়ালেখার জন্যই তিনি চার বছর ধরে পরিবার নিয়ে বাড়িটিতে ভাড়া থাকতেন। তবে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ বা শত্রুতা ছিল বলে কোনো দিন শোনেননি। আবদুল জব্বারের স্ত্রীর ভাই নূরুল ইসলাম বলেন, ‘মনে হচ্ছে কেউ পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ বলেন, নিহত তিনজনের শরীরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মরদেহগুলো প্রায় অর্ধগলিত। দুই থেকে তিন দিন আগে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতেরা তাঁদের কুপিয়ে হত্যার পর বাড়ির মালামাল লুট করেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যার কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত না। তবে কারণ উদ্ঘাটনে বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। রাজশাহীতে পুলিশের বিশেষ ক্রাইম ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়েছে। ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা এলে লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হবে।