মোঃ কায়ছার মাহমুদ:
শোবিজের উজ্জ্বল নক্ষত্র বলা হয় তাকে। গানের মানুষ হিসেবে তিনি যেমন সফল, তেমনি অভিনয়ে এসেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন। কোনো মাধ্যমেই ক্যারিয়ারে দাগ পড়তে দেননি। সম্প্রতি পূর্ণ করেছেন শততম নাটক! সাফল্যের ধারাবাহিকতায় অভিনয় করেছেন সিনেমাতেও। চলতি বছর মার্চে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা।
বলছিলাম এই সময়ের আলোচিত তারকা শিল্পী, অভিনেতা তাহসান রহমান খানের কথা। যার সৃজনশীল কাজ ও ব্যক্তিগত জীবন তারুণ্য থেকে সববয়সী মানুষের কাছে পরিণত হয়েছেন ‘আইকনিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে। সম্প্রতি তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বহুল আলোচিত প্রজেক্ট ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’-এ। গান ও অভিনয়ের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সাথে। তিনি বলেন, আমার কাছে ভক্তদের ভালোবাসাটা স্পেশাল। তারা শুধু ছবি তুলেই আমাকে ভুলে যায়নি। ১৫ বছর আগের গান এখনও যখন আমি গাই, তখন দেখি রাস্তাঘাট ব্লক হয়ে যায়। কাজ করে যেকোনো স্বীকৃতি যখন পাই, তখন মনে হয় এটার প্রাপ্য আমার ওইসব ভক্তরা। সবসময় বলি, ভক্তদের কারণে আমি বাংলাদেশে ‘ওয়ান অব দ্য লাকিয়েস্ট’ সেলেব্রিটি।
দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর আপনি নিরব ছিলেন। তারকাদের বিচ্ছেদ হলে নাকি তারা আর ক্যারিয়ারে শক্ত অবস্থান তৈরী করতে পারেন না। আপনার ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি। ওই খারাপ সময়টা সামাল দিয়েছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-
বিচ্ছেদ যখন হয়, তখন মানুষ কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে। আমি কখনোই এমন কাজে লিপ্ত হইনি। কারণটা হলো, আমি এখন যা বলবো, আমার মেয়ে বড় হয়ে সেগুলো শুনবে, দেখবে। আমি কখনোই চাইনা, আমার মুখ থেকে কোনো কটু কথা বেরিয়েছে এটা আমার মেয়ে জানুক। শুধু বিচ্ছেদ কেন, আমি ব্যান্ডদল ‘ব্ল্যাক’ থেকে বেরিয়ে আসার পরও চুপ ছিলাম। যখনই ভাঙন হয়, দুই পক্ষের ন্যারেটিভ থাকে। যদি ন্যারেটিভগুলো প্রকাশ পায়, তবে তিক্ততার শিখরে চলে যায়। এই তিক্ততায় ভাঙনগ্রস্ত ওই দুজন মানুষের লাভ হবে না। শুধু যারা গসিপ করবে তাদের লাভ হবে। মূল কথা হলো, আমি যদি ভুল করে থাকি তবে সেটা প্রকাশ পেত। আমি সঠিক কিনা সেটাও প্রকাশ পেয়েছে।
দেশে যে ক’জন ‘ক্লিন ইমেজ’-এর তারকা আছেন, তাদের মধ্যে আপনি একজন। কীভাবে এই ইমেজ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে?
আমি জানি যে, প্রকৃতি প্রকাশ করবে আমি কে! আমি যদি প্রতিনিয়ত ক্লিন প্রমাণের চেষ্টা করি তাহলে আমি ক্লিন থাকবো না। আমার নামে যদি কেউ মিথ্যে কিছু রটায়, তাহলে আমি কোনো উচ্চবাচ্য করবো না। কারণ, একটা সময় প্রকৃতি প্রকাশ করে দেবে, কোনটা সত্য! আর ১৬ কোটি মানুষকে আমি খুশী করতে পারবো না। আমার গান, সুর, অভিনয় দিয়ে যদি ৭-৮ কোটি মানুষ খুশী হয়, তারা যদি মনে করে তাহসান বাংলাদেশকে কিছু দিয়েছে, এজন্য যদি তারা আমাকে মনে রাখে এখানেই আমার স্বার্থকতা।
২০১৯ সাল গেল। এ বছরে মনে রাখার মতো গানের সংখ্যা হাতে গোনা দু-একটি। ঘুরে ফিরেই আগের গানগুলো বাজছে। কী বলবেন?
সেদিন আমার এক বন্ধু বলছিল, এ বছর কোনো গান হিট হয়নি তোর বেইলি রোডের গান ছাড়া (হাহাহাহা)। তবে ওই গানটা ছিল আমার প্রথম অ্যালবামের প্রথম গান ‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’। বেইলি রোডে একটি ইভেন্ট ছিল। তিনটা গান করেছি। তারমধ্যে ওই গানটা নতুন করে মানুষের কাছে ভালো লাগে। আসলেই এ বছর মনে রাখার মতো নতুন গান হয়নি। হয়তো ভিউস হয়েছে, কিন্তু মনে রাখার মতো গান না! কেন মনে রাখার মতো গান হচ্ছে না এটার উত্তর আমিও জানিনা।
২০২০ সালে গান নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
লেখা, সুর সব আমারই থাকবে। প্রতি মাসে একটা করে গান রিলিজ হবে। এটা আমার ব্যান্ড‘ তাহসান এন্ড দ্য ব্যান্ড’ থেকে হবে। একেবারে ব্যান্ড ফ্লেভারের গানই হবে।
ক’দিন আগে আপনার লেখা কবিতা ভাইরাল হয়েছে। আগে থেকে কবিতা লিখতেন?
এই কবিতা যখন প্রকাশ করার কথা ছিল সেটা ছিল গতবছর আমার জন্মদিনে। সেদিন আইয়ুব বাচ্চু ভাই মারা যান। তার মৃত্যুদিনে প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। তাই এবছর জন্মদিনে প্রকাশ করেছি। ছোট থেকেই আমার কবিতা লেখার অভ্যাস। প্রথম লিখেছিলাম ক্লাস এইটে পড়াকালীন। তখন কবিতা লিখতাম, যেগুলো গান মনে হতো, গান হিসেবে সুর করতাম।
দেশের বাইরে আপনার ব্যস্ততা বাড়ছে?
শিক্ষকতা ছাড়ার পর দেশের বাইরের শোগুলো বেশি করা শুরু করলাম। যারা দেশের বাইরে আয়োজক তারা নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলো। প্রচুর শো করেছি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আমার বেশিরভাগ সময় আমেরিকাতে যাওয়া হয়। এছাড়া কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াতেও মাঝেমধ্যে যাওয়া হয়। সবখানেই আমার শ্রোতা লক্ষণীয়। নিউ ইয়র্কে টেক্সিতে উঠলে বিল দিতে হয়না। সেখানে যারা টেক্সি চালান তাদের বেশির ভাগ বাঙালি! হাত তুললেই বলে, আরে তাহসান ভাই! শিক্ষকতা ছাড়লেন কেন?
আমি ১০-১২ বছর শিক্ষকতা করেছি। ওই সময়ে দেশের বাইরের শোগুলো নিতে পারতাম না। কারণ, সপ্তাহ খানেক ছুটি নিতে হতো। সেমিস্টারের মাঝে ছুটি নেয়াটা সম্ভব হতো না। আড়াই বছর আগে আমি রিয়েলাইজ করলাম আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল। কারও কাছে প্রমাণ করার কিছু নেই। বয়স যখন ৫০-৬০ বছর, তখন হয়তো শিক্ষকতায় ফিরে যাবো। আমি বুঝলাম, বাংলাদেশের মিডিয়াতে আমার প্রয়োজন আছে। কারণ, বাংলাদেশে কয়েকজন মূলত কাজ করি, তারা যদি ঝরে যায় তবে দেশের মানুষের চোখ অন্যদিকে ঘুরে যাবে। তাহলে ইকোনমিতেও ক্ষতি হবে। নিজেকে বড় করে বলছি না। আমি একটা ছোট্ট পার্ট যেটা ইগনোর করা যাবে না। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি থাকলে ইন্ডাস্ট্রির লাভ হবে।
সম্প্রতি শততম নাটকে কাজ করলেন। গান থেকে অভিনয়ে এসেছেন ২০০৮ সালে। কখন আপনি অভিনয়ে সিরিয়াস হলেন?
নীলপরি নীলাঞ্জনা, মন ফড়িংয়ের গল্প, মনসুবা জংশন এই তিনটা কাজের পর এমনভাবে সাড়া পেয়েছি, আমার কাছে মনে হয়েছে অভিনয় দিয়ে যদি মানুষের মনের মাঝে থাকতে পারি তাহলে এটাই চালিয়ে যাবো।