মো. নেজাম উদ্দিন (কক্সবাজার প্রতিনিধি):
১৯ আগস্ট পর্যটন এলাকা খুলে দিতে না দিতেই কক্সবাজারে ভরে গেছে পর্যটকে। গত শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় পৃথিবীর বৃহত্তর সমৃদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায় লোকে লোকারণ্য। কক্সবাজারের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, হলিডে মোড় পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে তিল ধারণের ঠাই নেই। হোটের মোটেল জোনেও পর্যটকে ভরে গেছে। সার্বিক নিরাপত্তা ও করোনা সংক্রমণ যেন না ছড়ায় সেদিকে কড়া নজর রাখছে জেলা প্রশাসন কক্সবাজার। পর্যটন খাতের জন্য আলাদা ইউনিট করে বেশ কয়েকটি টিম করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কাজ চলছে।
জেলা টুরিস্ট পুলিশ সার্বিক নিরাপত্তা ও সৈকতে আসা পর্যটকদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করছে। যাদের মুখে মাস্ক নেই তাদের সৈকতে নামতে দিচ্ছেন না এবং আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
হোটেল মোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজিয়েছেন। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তারা নিয়েছেন বেশ কিছু পদক্ষেপও। দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস পর পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়ায় কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্ট, ভাসমান ব্যবসায়ীসহ সবার মাঝে আনন্দ বইছে। ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। আগামী অক্টোবর থেকে কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুম শুরু হবে। এর মাস দেড়েক আগেই কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প উম্মুক্ত করে দেওয়ায় পর্যটন শিল্প উদ্যোক্তারা বেশ খুশি। চট্টগ্রাম থেকে আসা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক শাহিন জানান, পরিবারসহ এসেছি। অনেকদিন ঘরে বন্দি থাকার পর একটু খোলা হাওয়ায় ঘুরতে চলে এসেছি কক্সবাজারে।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মামা-ভাগিনা সুমন ও মাহমুদ জানান, অনেকদিন পর লকডাউন শেষ হলো। করোনার কারণে ঘরে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সমুদ্র স্নান করে মনকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করছি।
বেশ কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, পর্যটকদের শরীরের তাপমাত্রা দেখে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত জীবাণুমুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। কলাতলী গ্র্যান্ড স্যান্ডি হোটেলের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, আগের মতো পর্যটন সেবা নিশ্চিত করতে হোটেল রেস্তোরাঁ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। আশা করছি আমরা আগের মতো কাজ করতে পারব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সেবা দিতে পারব।
কক্সবাজার গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেলের অর্ধেক কক্ষ ভাড়া দিতে। যেহেতু মহামারীর সময়। তাই সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি। যারা হোটেল আসবেন তাদের সচেতনামূলক পরামর্শ দিতে হবে সবার।’
কিটকাট মালিক সমিতির সভাপতি মাবুবুল আলম মাবু জানান, আমরা খুশি। আজ প্রায় ৪ মাস পর আমরা প্রাণ ফিরে ফেলাম। আমরা কিটকাট সমিতির পক্ষ থেকে স্বাস্থবিধি মেনে সমুদ্র সৈকতে যত ছাতা আছে তা পরিচালনা করা হবে।
হোটেল রিগ্যাল প্যালেসের স্বত্তাধিকারী ফোরকান মাহমুদ জানান, আমরা হাইজনিক ম্যানটেইন করে ব্যবসা পরিচালনা করা হবে এবং পর্যটকরা ঝুঁকিমুক্তভাবে যেন থাকতে পারে সেদিকে আমাদের পূর্ণ খেয়াল থাকবে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম জানান, আশা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনার প্রভাব পড়বে না। সব হোটেল ব্যবসায়ী যদি একটু সচেতন হন তাহলে তেমন সমস্যা হবার কথা নয়। আরেকটি অনুরোধ, যারা কক্সবাজারে আসতে চান তারা আগে অবশ্যই নিজ এলাকা থেকে শারীরিক পরীক্ষা করে আসবেন। করোনার লক্ষণ থাকলে কক্সবাজার আসা থেকে বিরত থাকুন।
সার্বিক বিষয়ে কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সম্ভাবনার পর্যটনশিল্প করোনার কারণে ধুঁকছে। গত বছরের মতো চলতি বছরেও বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসা সচল করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেভাবেই পর্যটনও সচল করা হচ্ছে। জেলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রায় ২ লাখ লোক জড়িত। তাদের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়ার জন্য এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কঠোরভাবে স্বাস্থবিধি মানতে হবে।