এম.এইচ মুরাদঃ
বর্তমানে সরকারি গুদামে পৌনে ১৬ লাখ টনের মতো খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চালই রয়েছে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার টনের বেশি, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চালের মজুত যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে (৯ নভেম্বর পর্যন্ত) দেশে খাদ্যশস্যের মজুত ১৫ লাখ ৮১ হাজার ১৬৬ টন। এরমধ্যে চাল ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৩ টন, গম দুই লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টন এবং ধান ১২ হাজার ১৫৩ টন।
গত বছর (২০২১ সাল) এ সময়ে খাদ্যশস্যের মজুতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫০ টন। এরমধ্যে চাল ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ টন, গম এক লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টন এবং ধান চার হাজার ৫২০ টন। এর আগে ২০২০ সালের এ সময়ে খাদ্যশস্যের মোট মজুত ছিল ১০ লাখ ৪২ হাজার ৯৭০ টন। চাল ছিল সাত লাখ ৫৪ হাজার ১৩০ টন, গম দুই লাখ ৮১ হাজার ১২০ টন এবং ধান ১১ হাজার ৮৯০ টন।
এতে দেখা যায়, গত দুই বছরের চেয়ে বর্তমানে খাদ্যশস্যের মজুত বেশি। অন্যদিকে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বিস্তৃত পরিসরে ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এ মজুতকে ‘সন্তোষজনক’ বলছেন। আমন ধান বাজারে এলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. মজিবর রহমান বলেন, এখন আমাদের মজুত ভালো। শুধু এখন নয়, কিছুদিন ধরেই এটা আমরা সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখছি।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। সফলভাবে আমন কেনা গেলে, মজুত পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলছে। সেখানে মজুতের একটা অংশ চলে যাচ্ছে।
সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ৯ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, মানভেদে সরু চাল কেজিপ্রতি দাম ৬২-৭৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫২-৫৮ এবং কেজিপ্রতি মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা। প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৭০ টাকায়।
চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আট লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। প্রতি কেজি চাল ৪২ ও ধান ২৮ টাকা দরে কেনা হবে। গত ১ নভেম্বর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় নেওয়া হয় এ সিদ্ধান্ত।
আগামী ১০ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সবকিছু আমাদের মাথায় আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় বাংলাদেশে খাদ্যসংকট হবে বলে মনে করি না।
আমনের লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, আমন আমাদের একটা বড় ফসল। এখন অবশ্য বোরো অনেক বেশি হয়েছে। দুই কোটি টন বা তার বেশি বোরো হয়। আর আমন হয় এক কোটি ৫০ টনের মতো। এ বছর শ্রাবণ মাসে একদিন বৃষ্টি হয়েছে। আমরা এটি নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই চিন্তিত ছিলাম যে ধান লাগানো যাচ্ছে না। আমন হলো ফটোসেনথেটিক। দিন ছোট হয়ে এলে আমন ধানে ফুল এসে যায়, ফুল আসলেই কমে যায় উৎপাদন। ধান বড় হতে পারে না। কিন্তু একদম শেষের দিকে কৃষকরা সেচ দিয়ে নানাভাবে মোটামুটি চাষ করেছেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আবারও শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
তবে এবার আগের মতো ট্রাকে নয়, শুধু ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ডিলারের দোকান বা নির্ধারিত স্থায়ী স্থাপনা থেকে পণ্য বিক্রি হবে। নভেম্বর মাসের জন্য পণ্য বরাদ্দ পাবেন ফ্যামিলি কার্ডধারীরা। বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে টিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এদিকে নভেম্বরের এ পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
অন্যদিকে এ দফায় একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা এবং মসুর ডাল ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হবে।