স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টা। নগরীর জহুর হকার্স মার্কেটের প্রবেশ মুখে মানুষের গাদাগাদি। ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে রীতিমতো ভিড় ঠেলে। মার্কেটের সামনে যানজট আর মানুষের ভিড় দেখে কারো মনে হতেই পারে এখন আর করোনার সংক্রমণ নেই।
একটু অদূরেই রিয়াজউদ্দিন বাজারের তামাকুমন্ডি লেন। প্রবেশ মুখে কিছুটা ফাঁকা চোখে পড়লেও গলির ভেতরে থাকা দোকানগুলোতে এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। সবাই এসেছেন ঈদের কেনাকাটায়। মুখে মাস্ক পড়ার প্রবণতা কিছুটা লক্ষণীয় হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই এই দুই স্থানের কোথাও। ফুটপাতের চিত্রও একই।
গতকাল নগরীর বেশ কয়েকটি মার্কেট, শপিংমল ও ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক ঈদ বাজারের মতোই মানুষের ভিড় রয়েছে প্রতিটি স্থানে। অনেকেই দুই-তিনজন দলবদ্ধভাবে এলেও কেউ কেউ এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সাথে রয়েছেন শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণেরাও। তাদের একজন মসিউজ্জামান। পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে এসেছেন ঈদের বাজার করতে। কিন্তু দুই শিশুর মুখেই নেই মাস্ক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা মাস্ক পরে থাকতে পারে না। ছোট মানুষ, দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
এদিকে, ঈদের বাজারে শিশুদের না নিয়ে আশার পরামর্শ দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, বাজার করতে পরিবারের সকলকে মার্কেটে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দু’একজন গিয়ে সবার জন্য কেনাকাটা করে দ্রুত বাসায় ফিরতে পারেন। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। তাছাড়া শিশুদের তো কোনভাবেই জনসমাগম এলাকাতে নেয়া উচিত নয়। বয়স্ক যারা আছেন, তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি মানতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে দোকান খোলার এবং ক্রেতাদের কেনাকাটা করার শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। একই সাথে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কাউকে ওইসব নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি। লোকজন দোকানে ভিড় করে পছন্দের পোশাক, উপহার সামগ্রীসহ বিভিন্ন জিনিস কিনছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, কাপড়, কসমেটিকস, জুতা এগুলো ক্রেতারা অনেকে স্পর্শ করবে এবং সেগুলো প্রতিনিয়ত জীবাণুমক্ত করা সম্ভব হবে না। আর এসব থেকেই ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ। কেননা-যারাই মার্কেট বা বাজারে আসছেন, ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা, কার মধ্যে সংক্রমণ রয়েছে তা অজানা। ফলে ঈদের বাজারে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে দোকানি এবং ক্রেতারা নিজেরাই আক্রান্ত হবেন। উর্ধ্বমুখী হতে পারে করোনার সংক্রমণ।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী এপ্রিল মাসেই সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। একই সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও রেকর্ড ছাড়িয়েছে এ মাসেই। যদিও গেল কয়েক দিনের চিত্রে সংক্রমণ হার সামান্য কমেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বরাবরের মতোই অবস্থান করছে। তাই ঈদ বাজার থেকে শুরু করে মানুষের জনসমাগম যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে সামনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিনতর হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান।
এখন আর সচেতন করলেই হবে না বরং আইনের প্রয়োগ করতে হবে, এ অভিমত জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গেল একটা বছর যেভাবে প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে, এরপরও যদি মানুষ সচেতন না হয়, তাহলে কিছুই করার নেই। এখন আর সচেতন করার সময় নেই। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আরও বেশি কঠোর হতে হবে।