স্টাফ রিপোর্টারঃ
আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান চালিয়া উদ্ধার করা মদ, হরিণের চামড়াসহ ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জামাদি প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তার মেয়ে জেসিয়া আলম। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দিবাগত রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত বলেন তিনি।
মদের বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদমাধ্যমে জেসিয়া বলেন, আমার ভাইয়া মদ পান করে। সেগুলোই বাসায় ছিল। তবে ভাইয়ার মদ পানের লাইসেন্স রয়েছে। পাসপোর্টও আছে। আর ভাইয়ার বিয়ের সময় মায়ের সঙ্গে রাজনীতি করা নেতানেত্রীরা মিলে হরিণের চামড়া গিফট করেছে। সেটি ওয়ালে ঝোলানো ছিল।
ক্যাসিনোর সরঞ্জামাদির বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাসিনোর চিপস ওগুলো। আমরা নিজেরাই খেলতাম আর সময় কাটাতাম। তবে ক্যাসিনো খেলতে যে বোট আর সরঞ্জাম লাগে তা নেই আমাদের। ধরেন বাসায় তাস খেলে না কেউ? সে রকম একটা বিষয়। জাস্ট ক্যাসিনোর চিপগুলো ছিল বাসায়। মানুষ গেম খেলতে পারে না? ওরকম।
বিদেশি মুদ্রার বিষয়ে জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। বিদেশ থেকে আসার পর যে মুদ্রাগুলো বেঁচে যায় সেগুলো তো রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না। ওইসব মুদ্রা থেকে গেছে।
সবই তো বললেন, আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছে র্যাব। তাহলে অভিযানকে কী হিসেবে দেখছেন। জানতে চাইলে হেলেনার মেয়ে জেসিয়া বলেন, আমাদের বাসায় ইলিগ্যাল মালামাল রয়েছে মানলাম। তাই বলে ওরকমভাবে অভিযান করা যায়। কোনো ওয়ারেন্ট নেই, সার্চ ওয়ারেন্ট নেই হুট করে ঢুকে গেল আর অভিযান চালাল। কোনো কো-অপারেট নেই।
এর আগে রাত সোয়া ১২টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাবের সদর দপ্তরে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আটটার দিকে রাজধানীর গুলশান ২ এর ৩৬ নম্বর সড়কে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান শুরু করে। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে তার বাসা থেকে রাত সোয়া ১২টার দিকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছু বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
চার ঘণ্টার অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে বিদেশি মদ, বিদেশি কারেন্সি, হরিণের চামড়া, ক্যাংগারুর চামড়া, ওয়াকিটকি সেট এবং ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পশু সংরক্ষণ আইন ছাড়াও তার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হবে।’
সম্প্রতি ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসে। সেই কারণেই তাকে উপকমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে গত রোববার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উপকমিটির সদস্যসচিব ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ সই করেন। এতে বলা হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ হতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।