স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ সময় তিনি বলেন, “ব্যবসা সহজীকরণের একটি বড় দাবি ছিল আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের। বাণিজ্য অনুমতি (ট্রেড লাইসেন্স) প্রত্যেক বছর নবায়ন করতে হয়। এই বিষয়টি তাদের (ব্যবসায়ীদের) অনেক সময় মনে থাকে না অথবা দেখা যায় যে বছরের শেষ প্রান্তে এসে করতে হয়। সেসব বিষয়কে সহজীকরণ করার জন্য আইন অনুযায়ী ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে আমরা প্রথমবারের মতো ৫ বছর মেয়াদী ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের কার্যক্রম আজ হতে শুরু করলাম। এখন থেকে যে কোনো ব্যবসায়ী বাণিজ্য অনুমতি নেওয়ার পরে ১ বছর, ২ বছর, ৩ বছর বা ৪ বছর অথবা সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত নবায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।”
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকাল ১১টায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) এর মিলনায়তনে আয়োজিত ২ সপ্তাহব্যাপী (৬-২০ জুলাই) ‘ট্রেড লাইসেন্স সেবা বুথ স্থাপন’ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ৫ বছর মেয়াদি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন সুবিধা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ সেবা প্রথম ডিসিসিআই এর মাধ্যমে শুরু হলো জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এই সেবা, এ সুযোগে এই অর্থ বছরের আজ থেকে আমরা শুরু করছি এবং এই অর্থ বছরের প্রথম সেবাদান কার্যক্রম ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্যদের দিয়েই আমরা শুরু করছি। ঢাকা চেম্বার দিয়েই শুরু করছি, কারণ, আমি মনে করি, ঢাকা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ঢাকা চেম্বার দীর্ঘদিন ধরে তার অবস্থান করে নিয়েছে। ঢাকা চেম্বার ঢাকা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ ব্যাপী এখানে একটি বুথ দিয়ে রাজস্ব সেবা আমরা নিশ্চিত করব।”
এ কার্যক্রমের মাধ্যমে করপোরেশনের সাথে ব্যবসায়ী সমাজের সম্পর্ক সুসংহত হলো উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এর মাধ্যমে ঢাকা চেম্বারের সাথে আমাদের যে নিবিড় সম্পর্ক তা আরো সুসংহত হল। ব্যবসায়ীদের সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যে নিবিড় সম্পর্ক তা আরো সুসংহত হল। অংশীজন হিসেবে আমদের ঐক্যবদ্ধভাবে পথ চলতে হবে এবং পথ চলা উচিত- আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা আরো সমৃদ্ধ হলো।”
কামরাঙ্গীরচরকে একটি কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে গৃহিত পরিকল্পনা উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “প্রত্যেক শহরের একটি সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বা ফাইন্যান্সিয়াল হাব থাকে। ঢাকা যখন স্থাপিত হয় তখন চকবাজার ফিনান্সিয়াল হাব হিসেবে স্থাপিত হয়। কিন্তু ঢাকাকে নিয়ে কোনো সময় সুপরিকল্পিত নগরায়নের চিন্তা করা হয়নি। যে কারণে চকবাজারের সেই জৌলুস বা কার্যক্রম এখন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে গেছে। পরবর্তীতে মতিঝিলকে ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে মতিঝিলও তার সেই জৌলুস হারিয়েছে। আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে শহর পরিকল্পনার লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা চকবাজারকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে চাই। আমরা চাই সেটা ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। মতিঝিলকেও আমরা আবার পুনরুজ্জীবিত করতে চাই। সেগুলো বাস্তবায়নে আমরা এ বছর থেকেই কার্যক্রমে যাবো। এছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশের যে রূপকল্প, তার আলোকে আমরা কামরাঙ্গীরচরকে একটি সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।”
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সমীর সাত্তার বলেন, “আজকে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো তা ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যকার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এই এমওইউ স্বাক্ষরের মাধ্যমে এখানে স্থাপিত বুথটি একটি ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। এ ধরনের উদ্যোগ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর একটি অনন্য উদাহরণ এবং এর মাধ্যমে ব্যবসা সহজীকরণ প্রচেষ্টা শক্তিশালী হলো।”
ডিসিসিআই এর যে কোনো সদস্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডিসিসিআই ভবনে স্থাপিত দক্ষিণ সিটির বুথ থেকে আজ হতে ৫ বছর মেয়াদী ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও করপোরেশনের আওতাধীন যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ অঞ্চল হতে আজ থেকেই এ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাথে ডিসিসিআই এর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান এবং ডিসিসিআই এর সেক্রেটারি জেনারেল আনসারুল আরিফিন নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক ও ডিসিসিআইয়ের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।