স্টাফ রিপোর্টার:
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগ-১-এ কর্মরত। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্তও তিনি একই পদে ছিলেন। তারও আগে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে দুই দফায় দুই উপবিভাগে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। বিসিএস (গণপূর্ত) ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের এক কর্মকর্তা শিক্ষানবিশকাল বাদে পুরো সময় ঢাকায়ই অবস্থান করছেন।
শাহ আলম ফারুক চৌধুরী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ৫ বছর ৪ মাস ধরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা ডিভিশন-২-এ নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগে একই পদে ছিলেন। এ প্রকৌশলী নগর বিভাগের আওতায় রমনা-১ ও শেরেবাংলা নগরে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবেও বহু বছর ছিলেন। সব মিলিয়ে গত ১০ বছর ঢাকা ছাড়তে হয়নি তাঁকে।
এমন ৩৩ জন প্রকৌশলীর তথ্য মিলেছে, যাঁরা বছরের পর বছর ঢাকায় কর্মরত। তাঁরা এখন নিজ দপ্তরে ঢাকার প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকার দুটি সিভিল জোনের অধীনে ১৮টি বিভাগে এবং ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল একটি জোনে ১৩টি বিভাগ মিলে মোট ৩১টি বিভাগ। এই ৩১টি বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর ৩১ চেয়ারের বিপরীতে প্রতিযোগী ১৬৪ জন। তবে ঢাকার এই গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলো কবজায় রেখেছেন গুটিকয়েক প্রকৌশলী। কর্তৃপক্ষ চাইলেও তাঁদের ঢাকার বাইরে বদলি করতে পারে না। কারণ, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে দায়িত্বে থাকার কারণে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁদের সখ্য গড়ে ওঠে। ফলে ইচ্ছে করলেই সংস্থাপ্রধান বা মন্ত্রণালয় তাঁদের ঢাকার বাইরে বদলি করতে পারে না। আবার আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় তার সুবাদে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের আশীর্বাদও পান তাঁরা।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার চেয়ারগুলো কবজায় রাখা প্রকৌশলীদের সরাতে এবার নীতিমালা তৈরি করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাতে দুই বছর ঢাকায় থাকার পর বাইরে বদলি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেন,‘কিছু প্রকৌশলী ঘুরেফিরে ঢাকায় পোস্টিং নিচ্ছেন, তা আমরাও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দেখা গেছে, যে প্রকৌশলী ঢাকার বাইরে আছেন, তাঁরও একবারের জন্য হলেও ঢাকায় আসতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সেই পরিবর্তনের কাজটি অর্থাৎ যাঁরা ঢাকায় আছেন তাঁদের বদলি করা কঠিন হয়ে যায়। তাই আমরা এমন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছি, যেটি বাস্তবায়ন করলে আর এ বৈষম্য থাকবে না।’
জানা যায়, মো. সাইমুম হোসেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে শেরেবাংলা নগর বিভাগ-২-এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। এর আগে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা বিভাগ-১-এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারও আগে ছিলেন ঢাকায় রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে। স্বর্নেন্দু শেখর মণ্ডল বর্তমানে নগর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। এর আগে তিনি গণপূর্ত বিভাগ-৪-এ নির্বাহী প্রকৌশলী ছাড়াও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে বিভাগ-৪ ও ইডেন বিভাগে ছিলেন। আজিমপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস আহমেদ আগে গণপূর্ত বিভাগ-২-এ নির্বাহী প্রকৌশলী এবং উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা-১, রমনা-১ ও মিরপুর বিভাগে ছিলেন। মিরপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নু আগে মহাখালী ও শেরেবাংলা নগর উপবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। মেট্রোপলিটন জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান আগে একই পদে ছিলেন গণপূর্ত বিভাগ-৪, মেডিকেল বিভাগ ও নারায়ণগঞ্জে। এ ছাড়া তিনি উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে রমনা-২-এ ছিলেন। রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান (সবুজ) আগে গণপূর্ত সম্পদ বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী এবং উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে রমনা-১ ও মহাখালী বিভাগে ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তৈমুর আলম ও আবুল কালামও দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় আছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহফুজুল আলম প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি একই পদে প্রধান কার্যালয়ের স্বাস্থ্য উইংয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। প্রভাবশালী এ প্রকৌশলী উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে নগর বিভাগ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর বর্তমানে সংস্থাপন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ইতিপূর্বে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাভার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব আগে মেডিকেল বিভাগে ছিলেন। ৯ বছর ধরে আরবরিকালচার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কুদরত এ খুদা। মহাখালী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার একই পদে মিরপুর বিভাগে এবং উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে রমনা-১ বিভাগে ছিলেন। সচিবালয় (ইডেন) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার আগে বিভাগ-৫-এ উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছিলেন। গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা আগে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা উপ-বিভাগ-৬, রমনা-১, শেরেবাংলা নগর-৩-এ ছিলেন। শেরেবাংলা নগর-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন আগে ছিলেন মহাখালী বিভাগ ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) মোহাম্মদপুর বিভাগে। তিনি উত্তরা উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্বেও ছিলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প-৫) এ এন এম মাজহারুল ইসলাম আগে বিভাগ-৩ ও মেট্রোপলিটন জোনে ছিলেন। এ ছাড়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন বিভাগ-৪-এ। জাগৃকের মোহাম্মদপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান আগে ছিলেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে নগর (বঙ্গভবন) বিভাগে। জাগৃকের ঢাকা বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী আগে একই পদে ছিলেন সাভারে। সম্পদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন খান আগে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। মেডিকেল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল হক মুন আগে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা উপ-বিভাগ-১-এ ছিলেন। বিভাগ-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুল ইসলাম আগে একই পদে সাভার বিভাগে ছিলেন। নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন আগে ছিলেন ইডেন ও মহাখালী বিভাগে। বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শায়খ আগে মিরপুর বিভাগে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছিলেন।
এ ছাড়া ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল (ইএম) বিভাগে ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে আছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শমিরণ মিস্ত্রি ইএম/৭, পবিত্র কুন্ডু ইএম/৬, আইয়ূব আলী উত্তরা প্রকল্প, আশরাফুল আলম ইএম/ ১, মো. মহিবুল ইসলাম ইএম/৪, আব্দুল হালিম ইএম/৯, শরীফ মাসুম ইএম/১০, জাহাঙ্গীর আলম বিভাগ-২, নিয়াজ তানভীর ইএম/৩।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঢাকার চেয়ারগুলো কবজায় রাখা প্রকৌশলীদের সরাতে এই নীতিমালা অনেকটা কার্যকর হবে। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ঢাকায় বা বড় শহরগুলোতে তদবির করে দীর্ঘদিন ঠিকে থাকা প্রকৌশলীরা আর বেশিদিন গেড়ে বসে থাকতে পারবে না। এর ফলে এখন থেকে কোন বিশেষ কারণ ছাড়া প্রত্যেক প্রকৌশলীর দুই বছর ঢাকায় থাকার পর অন্য জেলায় বদলি বাধ্যতামূলক হবে। (সূত্র:আ,প্র)