স্টাফ রিপোর্টারঃ
চাকুরি বাঁচাতে মানুষ নিজ নিজ গ্রাম এলাকা থেকে ঢাকায় নিজের কর্মস্থলে ছুটছেন। গার্মেন্ট কর্মী, হোটেল শ্রমিক, দোকানের শ্রমিক, লঞ্চঘাটের শ্রমিক, ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমজীবীরা দলে দলে ঢাকায় আসছেন। রাস্তায় তাদের পদে পদে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলছেন। এদিকে পরিবহন খাতের শ্রমিকদের কাজে যোগদানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
অসহায় শ্রমজীবী মানুষগুলো ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ভটভটি, কোথাও ছোটখাটো ভ্যান নিয়ে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। প্রচন্ড রৌদ্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এভাবে দুর্ভোগ নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করছেন। অনেকে নারী শ্রমিক ছোট ছোট সন্তান নিয়ে দুই আড়াইশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসছেন। যানবাহন সংকটে রাস্তায় তাদের অসহায়ভাবে চলতে দেখা গেছে। পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় ভেঙে ভেঙে আসতে ৮শ’ টাকার মতো ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় আসতে কয়েক জায়গায় ট্রাক কিংবা গাড়ি বদল করতে হয়েছে? এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে ছালেহা বেগম নামে এক গার্মেন্ট শ্রমিক বলেন, ভীষণ কষ্ট করে ঢাকায় আসছি। পথে অনেক স্থানে এক জায়গা থেকে নেমে আরেক জায়গায় গিয়ে পিকআপ ভ্যানে কিংবা ট্রাকে উঠে আসতে হয়েছে। এভাবে পদে পদে ঝামেলা নিয়েই রাজধানীতে আসতে বাধ্য হলাম। তিনি বলেন, উপায় নেই; গার্মেন্ট কোম্পানির কাজ করি। না আসলে চাকুরি থাকবে না। পেটের তাগিদে ঢাকায় আসতে বাধ্য হয়েছি।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর মার্কেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা করোনাভাইরাসের কারণে যারা গ্রামগঞ্জে গেছে। তারা সরকারি ঘোষণা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় কর্মস্থলে যোগদানের জন্য দলে দলে ঢাকায় ছুটছেন। কিন্ত বিধিবাম শ্রমিক কর্মচারীরা ঢাকায় ফিরতে পারিবহন পাচ্ছেন না। চাকুরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ছোটখাটো ট্র্যাক, পিকআপভ্যানে অধিক ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে পাড়ি জমিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষরা।
বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের পঞ্জগর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম. রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ অধিকাংশ জেলার শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ জীবন বাঁচাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। গ্রামের মানুষ কাজের সন্ধানে রাজধানীতে ছুটছে।
গাইবান্দার মিয়া হোসেন নামে একজন শ্রমিক বলেন, স্বল্প পরিসরে সব খুলে দেওয়া হয়েছে। সেইভাবে স্বল্প পরিসরে পরিবহন খুলে দিলে মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। পরিবহনেও সামাজিক দূরত্ব বজায়ে রেখে চালানোর ব্যবস্থা করলে এক দিকে অসহায় শ্রমিকদের কষ্ট লাঘব হবে। আর কিছু স্বল্প আয়ের পরিবহন মালিক বাস চালানোর সুযোগ পাবে।
লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালে এখন ধুধু করছে। বিশেষ করে ঢাকার নৌবন্দর স্থলবন্দর দিয়ে সরাসরি ঢাকায় প্রবেশ করতে ভীষণ কষ্ট করতে হচ্ছে। করোনায় শ্রমজীবী মানুষের সবকিছু লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে।
সোমবার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে শ্রমজীবী মানুষের ঢল দেখা গেছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন পাল্টে কর্মস্থলে ছুটছেন তারা।
মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে শ্রমজীবী মানুষকে ফেরিতে নদী পার হতে দেখেছি। তিনটি ফেরিতে মানুষের চাপ বেশি ছিল। সব মিলিয়ে আনুমানিক দুই হাজার শ্রমজীবী মানুষ নদী পার হয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
কাঁঠালবাড়ী ঘাটে সেনাবাহিনী ও পুলিশ রয়েছে। তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ফেরিতে তুলে দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। শিমুলিয়া ঘাটে কোনো গণপরিবহন না থাকায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। বেশি ভাড়ায় তারা মিশুক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন। কেউ যাচ্ছেন পিকআপ ভাড়া করে।
এ বিষয়ে পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, সরকার করোনা মোকাবেলায় কাজ করছে। পরিবহন মালিকরা সরকারকে সাধ্যমতে সহযোগিতা করছে। পরিবহন খাতের প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিকের কাজ নেই তারা না খেয়ে থাকছে। তাদের বিষয়ে আপনার মতামত কী? জবাবে তিনি বলেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যে টুকু সম্ভব তা সহযোগিতা করা হয়েছে। এবং যতদিন এই সংকট থাকবে ততদিন শ্রমিকদের পাশে থাকবে মালিক সমিতি।