স্টাফ রিপোর্টারঃ
অপহরণ ও হত্যার হুমকির মামলা হওয়ার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককে চলে গেছেন সিকদার পরিবারের দুই পুত্র রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মীর শহীদুল ইসলাম বলেন, “রন ও দিপু মেডিকেল ভিসা নিয়েই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে চলে গেছে। তারা কোনো মামলার আসামি কি না সে বিষয়ে আমরা সে সময় অবগত ছিলাম না।”
বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ শাখার আওতায় থাকলেও আদালত, তদন্ত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কেউ মামলার বিষয়ে অবগত করেনি জানিয়ে এসবি প্রধান বলেন, “তবে পরে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে।”
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন ও দিপুর বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া এবং অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত ১৯ মে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়।
এরপর গত ২৫ মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই ভাই ব্যাংককে পাড়ি জমিয়েছেন বলে শুক্রবার খবর প্রকাশ করে ডেইলি স্টার।
তাতে বলা হয়, ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আরঅ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংককে গেছেন রন ও দিপু সিকদার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ উল আহসান বলেন, গত ২৫ মে সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আরআ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দুইজন যাত্রী ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
“সেটা ছিল সরকার অনুমোদিত একটি মেডিকেল ইভাকুয়েশন ফ্লাইট।”
মামলার আসামি হওয়ার পর ব্যবসায়ী দুই ভাই কীভাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশ ছাড়তে পারলেন, তার বিবরণ দিয়েছে ডেইলি স্টার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার অনুমতি চেয়ে গত ২৩ মে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। সেই দিনই অনুমোদন দেয় থাই সরকার। তারপর ঢাকায় থাই দূতাবাসে চিঠি দিয়ে দুজনের মেডিকেল ভিসা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। পরদিন ২৪ মে ভিসা ইস্যু হয়ে যায় এবং তার পরের দিন তারা ব্যাংকের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার বলেন, “উই হ্যাভ নো আইডিয়া অ্যাবাউট ইট। আমাদের যারা দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও জিজ্ঞেস করেছি, তারাও বলেছে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। আমিও আপনাদের মতো পেপারে দেখেছি। এর বাইরে আমরা কিছু জানি না।”
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের বিষয় হয়ে থাকলে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং বিমান অবতরণের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করেছে বলে যে খবর এসেছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।”
গুলশান থানায় গত ১৯ মে দায়ের করা ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রন হক সিকদার গত ৭ মে সকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিসহ গুলশানে এক্সিম ব্যাংকে আসেন। তারা তাদের প্রস্তাবিত ঋণের টাকার বিপরীতে ‘কো-লেটারেল’ হিসেবে সিকদার গ্রুপের রূপগঞ্জ কাঞ্চন প্রস্তাবিত আদি নওয়াব আসকারী জুট মিলটি পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যান এমডি হায়দার আলী ও অতিরিক্ত এমডি ফিরোজকে।
ওই স্থানটি পরিদর্শন করে জায়গাটির বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে গ্রাহকের বন্ধকী মূল্যের বিশাল ব্যবধান হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি দ্বিমত পোষণ করেন।
এর জের ধরে ‘কৌশলে’ এক্সিম ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পূর্বাচলে নিয়ে ‘হত্যার উদ্দেশে গুলিবর্ষণ’ এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেখান থেকে বনানী ১১ নম্বরে সিকদার হাউজে নিয়ে ‘হেনস্তা করা হয়’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, জমির দাম কম বলায় রন ও দীপু এক্সিম ব্যাংকের এএমডি ফিরোজকে ‘মারতে উদ্যত হলে’ তিনি মাফ চেয়ে প্রাণে বাঁচেন।
“রন হক সিকদার ও দিপু সিকদার (এক্সিম ব্যাংকের) এমডিকে প্রজেক্টের সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী আছে ব্যক্ত করে তাদের সাথে থাকা অস্ত্র তাক করে জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়।”
এক্সিম ব্যাংকের এমডি, এএমডি ও দুই চালককে প্রায় ৫ ঘণ্টা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে ন্যাশনাল ব্যাংকের আইনি পরামর্শক হিসেবে আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার ২৮ মে এক বিবৃতিতে বলেন, রন হক এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে কোনো আবেদন করেননি। তিনি এক্সিম ব্যাংকের গুলশান এভিনিউ শাখায় যাননি, এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও এএমডির সঙ্গেও দেখা করেননি।
“সেই ক্ষেত্রে ঋণ এবং এই সংক্রান্ত জামানত নিয়ে দর কষাকষির কোনো সুযোগ আসতে পারে না। অদ্য মামলার বাদী উল্লেক্ষিত ঘটনার সাক্ষী নয়, মামলার এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও এএমডির সাথে আলোচনা না করে ব্যাংকের শুধু নির্বাহীদের সাথে কথা বলে ঘটনার ১২ দিন পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করেন, যাহা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি এবং মামলাটি শুধু আমার মক্কেলকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য দায়ের করা হয়।”
পাল্টা অভিযোগে বাসেত মজুমদার বলেন, “এক্সিম ব্যাংকের জনৈক পরিচালক ব্যবসা প্রসারের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকারের ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। জনৈক পরিচালক তার কন্যার নামেও ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। জনৈক পরিচালক বেনামে ঋণ সুবিধা গ্রহণের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেন।
“গুলশান থানায় মামলা নম্বর ৩ এর বাদী নিজেও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এসব ঋণের উপযুক্ত জামানত ব্যতিরেকে ঋণ প্রাপ্ত হইয়া বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে জনৈক পরিচালক ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিপুল অংকের ঋণ সুবিধা আবেদনের নিমিত্তে এ বছরের ১৩ মে পাঁচ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন।”
এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, “ভুক্তভোগী চারজনের বক্তব্য নিয়েছি। চারজনেই এজাহার অনুযায়ী ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।”
একজন নিরপেক্ষ সাক্ষীর খোঁজে ঘটনাস্থল তিনশ ফুটেও কয়েকবার গিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু ফাঁকা জায়গায় নিরপেক্ষ সাক্ষী পাওয়া দুষ্কর । তারপরও চেষ্টা করছি নিরপেক্ষ সাক্ষীর খোঁজে।”