স্টাফ রিপোর্টারঃ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে আয় কমে গেছে মানুষের। এই ক্ষতি সামাল দিতে বাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ কমাচ্ছে রাজধানীর মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনা মহামারিতে আয় কমে যাওয়ায় পূর্বের বাসার অংশ বিশেষ ভাড়া দিচ্ছেন। কেউ কেউ পুরো পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে বাসা ছেড়ে মেসে চলে যাচ্ছে। এ কারণে খালি হওয়া বাসার সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে টু-লেট, সাবলেট পোস্টারের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের বিপর্যয়কর অবস্থা রোধে মার্চ মাসের শেষ দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন বিপণন সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ। এ অবস্থায় অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেতন কমিয়ে দিয়েছে, ছাঁটাই করার মধ্য দিয়ে চাকরি অবসান করেছে, না হয় চাকরি সাময়িক স্থগিত করেছে। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত তিন মাস কোনোভাবে চললেও অনেকে স্থায়ীভাবে খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীর শ্রমজীবী মানুষের বসবাস- এ রকম এলাকা মিরপুর, বাড্ডা ও রামপুরায় ভাড়াটেদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
রাজধানীর মিরপুর ও বাড্ডার বিভিন্ন গলির মোড়ে দেখা গেছে পুরোপুরি ও বাসার অংশ বিশেষ ভাড়া দেওয়ার জন্য জন্য বিপুল সংখ্যক পোস্টার, বিজ্ঞাপন বা নোটিস। এ ধরনের পোস্টার লাগানোর হার আগের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে উত্তর বাড্ডার বাড়িওয়ালা আসগর আলী বলেন, তার পাঁচতলা বাড়ির আটটি ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি এক মাস আগেই খালি হয়ে গেছে। আর জুন মাস থেকে আরও দুটি খালি হবে। এর মধ্যে দুজন শেয়ার করে থাকত। মে’র শুরুতে কাউকে না বলে চলে গেছে। অন্যজন একজন সাবলেট খুঁজছে। বাকি দুটি ফ্লাটের মধ্যে একটি নতুন ভাড়াটে পাওয়া গেছে। একটি এখনো কোনো ভাড়াটে পাওয়া যায়নি। আসগর আলীর মতে আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ কর্ম হারানোর কারণে এমন হচ্ছে।
মিরপুর-১০ সেকশনের বাড়িওয়ালা সেকান্দার আলী জানান, তার দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটে চলে যাওয়ার নোটিস দিয়েছে। জুন থেকে খালি হবে। দুটির অংশ বিশেষের ভাড়াটে পাওয়া গেলেও বাসাদুটির পুরো ভাড়াটে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা সাবলেট সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে।
সেকান্দার আলী জানান, বাসাভাড়ার এমন আকাল আগে কখনো দেখেনি। তার বাসা থেকে যারা চলে গেছে তারা কেউ কোন অফিসের কর্মী, কেউ দোকানদার, কেউ ছোট্ট ব্যবসায়ী, কেউবা বিআরসিটি অফিসের দালাল। এর সব ভাড়াটের কেউ কম ভাড়ার বাড়িতে গেছে, নয়তো স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এমন হয়েছে তার ধারণা।
নিজের বাসার এক-তৃতীয়াংশ সাবলেট দিতে চান-বাড্ডায় পাওয়া গেলো এমন একজন ভাড়াটে। গলির মাথায় ‘সাবলেট’ পোস্টারের ফোন নম্বরে ফোন ওপার থেকে আরসাদ নামে একজন জানালেন তার একটি রুম ভাড়া দিতে চান। বাসাভাড়া নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে জানালেন তিনি একটি মোটরসাইকেল ডিলারের দোকানে চাকরি করেন। তার নিয়োগদাতা দোকানটি জানিয়ে দিয়েছে এ মুহূর্তে চাকরি কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে যেন যোগাযোগ করে। এখন সঙ্গে থাকলেও বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই ১৩ হাজার টাকার বাসাটির একটি অংশ বিশেষ সাবলেট দিয়ে বিপদকালীন সময়ে কোনোমতে টিকে থাকতে চান।
রাজধানীর তৈরি পোশাক শ্রমিক ও নিম্ম আয়ের মানুষের অবস্থা আরও খারাপ। এ মুহূর্তে না পারছে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে, তারা না পারছে বাসায় থাকতে। এসব কম আয়ের মানুষের পক্ষ থেকে বাসাভাড়া কমানোর কথা বললেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বাড়িওয়ালার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অনেকের রোজগারের একমাত্র অবলম্বন বাড়িভাড়া থেকে আয়। কেউ কেউ ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি বানানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধের তাগাদা আছে, এখন ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ থাকলেও পরে হলেও দিতে হবে। তাদের এখন বাড়িভাড়া কমিয়ে পরে টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে!
বাড়িভাড়া নিয়ে এ অবস্থা করোনাভাইরাসের অভিঘাত বলে মনে করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এ রকম খবর পাওয়া গেছে, রাতে পুরো বাসার লোক চলে গেছে। সকালে উঠে বাড়িওয়ালা কাউকে পায়নি। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এমন ঘটেছে।
বাড়িওয়ালার চাপ সহ্য করতে পারবে না বলে হয়তো চলে গেছে। তারা বাড়িওয়ালাকেও বিপদে ফেলে দিয়ে গেছে। আর যারা ২০/৩০ হাজার টাকা বেতন পায় তাদের কারো আয় কমেছে, কারো কারো হয়তো চাকরিই হারিয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের সঞ্চয় আছে তারা হয়তো আরও কিছুদিন টিকে থাকার চেষ্টা করবে। কিন্তু যাদের সঞ্চয় নেই তারা ব্যয় কমাতে কম বাসার ভাড়ায় যাচ্ছে, না হয় পরিবার-পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে, এটা তারা একেবারে নিরুপায় হয়ে করছে।