স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। দুর্যোগপ্রবণ এ দেশের খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘পদ্মা সেতু’। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসছে, বহুল কাঙ্ক্ষিত এ সেতুটি কতটা ভূমিকম্প সহনশীল? তবে পদ্মা সেতুর নির্মাণসংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
তারা বলছেন, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে পদ্মা সেতু। কারণ এ সেতুতে ডাবল কারভেচার ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি।
পদ্মা সেতু কীভাবে ভূমিকম্পে টিকে থাকবে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রকৌশলীরা। তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্প মাটিতে কম্পন সৃষ্টি করে। এ কম্পন প্রথমে পিলারে যাবে। বিয়ারিংগুলো এর কম্পন ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এছাড়া স্প্যানে ভূমিকম্পের সামান্য আঘাত গেলেও তা থেকে সেতুকে রক্ষার জন্য প্রতিটি জোড়ায় সংকোচন-সম্প্রসারণের বিয়ারিং বসানো হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘খরস্রোতা পদ্মা নদীতে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু। পানিপ্রবাহের বিবেচনায় বিশ্বে আমাজন নদীর পরই এর অবস্থান। মাটির ১২০ থেকে ১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো হয়েছে এ সেতুতে। পৃথিবীর অন্য কোনো সেতু তৈরিতে এত গভীরে গিয়ে পাইল প্রবেশ করাতে হয়নি, যা পৃথিবীতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় রেকর্ডটি হলো- ভূমিকম্পের বিয়ারিং সংক্রান্ত। এই সেতুতে ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর পরের বিশ্বরেকর্ড হলো পিলার এবং স্প্যানের মধ্যে যে বিয়ারিং থাকে সেটি। এখানে ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে কোনো সেতুতে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া নদীশাসন সংক্রান্ত একটি রেকর্ডও রয়েছে। ১৪ কিলোমিটার (১ দশমিক ৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এটাও রেকর্ড।’
২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুইস্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ মিটার।
পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ হয় ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।