স্টাফ রিপোর্টারঃ
চা শ্রমিকদের মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠকে।
একই সঙ্গে বাড়তি চা পাতা তোলা, উৎসব বোনাসসহ শ্রমিকদের আনুপাতিক হারে অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা বাড়ানোর বিষয়েও সম্মতি দিয়েছেন চা বাগান মালিকরা বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রী রোববার থেকে শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শিগগির শ্রমিকদের আগ্রহ অনুযায়ী তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলবেন।
শনিবার বিকালে গণভবনে বিকাল ৪টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষে মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাংবাদিকদের জানান মুখ্য সচিব।
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চা শ্রমিকরা ১৯ দিন ধরে ধর্মঘটসহ আন্দোলন করছেন। এরমধ্যে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) নেতাদের সঙ্গে শনিবার বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; যেটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। চা শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান রয়েছে মন্তব্য করে আহমদ কায়কাউস জানান, বৈঠকে ১৩টি চা বাগানের মালিক উপস্থিত ছিলেন।
শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে মুখ্য সচিব জানান, নতুন এ মজুরির পাশাপাশি প্লাকিং বোনাস (অতিরিক্ত চা পাতা তোলার অর্থ), মাঠ কারখানার অধিকার আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি ও বেতনসহ উৎসব ছুটি সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে।
“অসুস্থতা ছুটি বাড়ানো হবে। ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা আনুপাতিক হারে বাড়বে। কাজে অনুপস্থিতি অনুযায়ী উৎসব ভাতা বাড়বে, মোট প্রদত্ত চাঁদার ৫ শতাংশ প্রশাসনিক খরচ সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে।”
বাগান মালিকরা রেশন ২৮ টাকায় কিনে এখন ২ টাকায় শ্রমিকদের দেয় জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, “ভর্তুকি মূল্যে রেশন সুবিধা বাড়ানো হবে। ”
একই সঙ্গে শ্রমিকদের চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন, চা–শ্রমিকদের পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ, গো চারণভূমি চৌকিদারি বাবদ ব্যয়, বিনা মূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি এবং বাসাবাড়িতে উৎপাদন বাবদ আয় বাড়বে জানান তিনি।
“এসব কিছু মিলিয়ে মজুরি সাড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার মত দৈনিক পড়বে। এটা প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন,” বলেন মুখ্য সচিব।
শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন চা শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন, সেটা উনি করেছেন। আগামীকাল থেকে চা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলেছেন তিনি। শিগগিরই চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন।”
দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে এ আন্দালন করছেন সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের প্রায় দেড়শ বাগানের শ্রমিকরা। এসময়কালে ধর্মঘটের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ। |ফাইল ছবি
আন্দোলনের এক পর্যায়ে টানা ধর্মঘটের ১২ দিন পর গত ২০ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে মজুরি বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার ঘোষণার পর সুরাহার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ওইদিন শ্রমিক ইউনিয়ন কাজে ফেরার ঘোষণা দিলে কয়েকটি বাগানে শ্রমিকরা কাজে নেমেছিলেন। কিন্তু পরে অন্যরা এ মজুরি মানেননি এবং আবার কাজ বন্ধ করেন। তারা আগের মতই ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নিজের মুখে না বললে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভিডিওতে হলেও তাদের উদ্দেশে আশ্বাস দিলে তারা কাজে ফিরবেন। এরপর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়।
দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৯ অগাস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রথম চারদিন শ্রমিকরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। ১৩ অগাস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। এখনও সিলেটের অধিকাংশ বাগানের শ্রমিক কাজে ফিরেননি। শুধু গুটিকয়েক বাগানের শ্রমিকরা কাজ করছেন।