স্টাফ রিপোর্টার:
নতুন অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। অপরদিকে জিডিপির আকার ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। সেই মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ ছাড়া বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা। যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
তবে এবার ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। দেশের জনসাধারণের স্বার্থে ও দেশীয় শিল্পর সুরক্ষায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের শুল্ক ও কর আরোপ বা ছাড়ের প্রস্তাবনা আসতে পারে। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে। ফলে কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে আবার কিছু কিছু পণ্যের দাম কমতেও পারে।
যে পণ্যের দাম বাড়তে পারে :
আমদানি করা স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড
নতুন অর্থবছর আমদানি করা স্বর্ণের দাম বাড়বে। কারণ, ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় বিদেশে থেকে আসার সময় ব্যাগে স্বর্ণ আনার পরিমাণ ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) থেকে কমিয়ে ১১৭ গ্রাম করা হচ্ছে। আবার ভরিপ্রতি শুল্কের পরিমাণ ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
জমি ও ফ্ল্যাটের দাম
ঢাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিডিএ) আওতায় জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে গেইন ট্যাক্স ৪ থেকে ৮ শতাংশ করা হচ্ছে। আর দেশের অন্য এলাকার ক্ষেত্রে তা ৩ থেকে ৬ শতাংশ। তাই আগামী অর্থবছরে জমি ও ফ্ল্যাটের দাম বাড়তে পারে।
সিগারেট
প্রতি বাজেটেই দেখা যায় বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়। এবারও তাই হতে যাচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের দাম ৯০ টাকা, মধ্যম স্তরের ১৩৪ টাকা, উচ্চস্তরের ২২৬ টাকা এবং অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জর্দা-গুলের দামও বাড়ানো হচ্ছে। তবে দাম অপরিবর্তিত থাকছে বিড়ির দাম।
বাসমতি চাল
এবার বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। যার প্রভাবে বাড়বে এই চালের দাম। অর্থাৎ এর ফলে দাম বাড়তে পারে বিরিয়ানি বা কাচ্চির।
কাজুবাদাম
স্থানীয় বাদামচাষিদের উৎসাহিত করতে কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যমান ১৫ শতাংশ থেকে শুল্ক বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। সুতরাং আমদানি করা কাজুবাদামের দাম বাড়বে।
খেজুর
বাজেটে তাজা ও শুকনো খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে। ফলে পণ্যটির দাম বাড়বে।
সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী
এরই মধ্যে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া নির্মাণসামগ্রী যেমন: রড, সিমেন্ট, ইট ও বালু ইত্যাদি পণ্যের দাম আরও বাড়ছে। আসন্ন বাজেটে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে ২০ টাকা ভ্যাট আরোপ হতে পারে।
দামি গাড়ি
নতুন অর্থবছরের বাজেটে দামি গাড়ির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ হতে পারে। ফলে দামি গাড়ির দাম আরও বেশি বাড়বে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে বর্তমানে সম্পূরক শুল্ক বসে ২০০ শতাংশ, যা ২৫০ শতাংশ করা হতে পারে। আর ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩৫০ শতাংশ বেড়ে হতে পারে ৫০০ শতাংশ।
এ ছাড়া পরিবেশদূষণ এবং যানজট ঠেকাতে এই প্রথমবারের মতো একটির বেশি গাড়ি থাকলে কার্বন কর আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার।
এলপিজি গ্যাস
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) তৈরির কাঁচামালে শুল্ক বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বাড়বে ভ্যাটও। শুল্ক বিদ্যমান ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। আর ভ্যাট বিদ্যমান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।
ভ্রমণ খরচ
ভ্রমণ কর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব আসতে পারে। বর্তমানে গন্তব্য বিবেচনায় ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হয়। এর ফলে উড়োজাহাজে ভ্রমণে ভোক্তার খরচ বাড়তে পারে।
অ্যালুমিনিয়াম ও প্ল্যাস্টিকের গৃহস্থালি পণ্য
প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি টেবিল ও রান্নার পাত্র, টিস্যু পেপারসহ বিভিন্ন পণ্যের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
আমদানি করা ফ্রিজ, ফ্যান, ও এস্কেলেটর
আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাজেটে এস্কেলেটর তৈরির কাঁচামালের শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকতে পারে। বর্তমানে এর হার ৬ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশ।
কোমল পানীয়
কোমল পানীয় খাতে বিদ্যমান টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। যার কারণে বাড়বে দাম।
ওভেন
আগামী জুলাই থেকে বিদেশি ওভেন আমদানি শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে মোট করভার করা হচ্ছে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। ফলে বাড়বে ওভেনের দাম।
কলম
বাজেটে কলমের ওপরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে। সুতরাং দাম বাড়তে যাচ্ছে এই প্রয়োজনীয় পণ্যটিরও।
চশমা ও সানগ্লাস
চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হতে পারে এবারের বাজেটে। পাশাপাশি উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।
দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের
মাংস
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মাংস ও মাংসজাত পণ্যকে নিত্যপণ্যের ক্যাটাগরিতে আনার প্রস্তাব আসতে পারে। একই সঙ্গে এই পণ্যের উৎসে অগ্রিম আয়কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে। যার প্রভাবে মাংসের দাম কমতে পারে।
দেশে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক এলইডি বাল্ব ও সুইস-সকেট
উৎপাদন উৎসাহিত করতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক এলইডি বাল্ব ও সুইস সকেট আমদানি করতে শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রয়েছে। এবারের বাজেটে শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে। যার প্রভাবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এলইডি বাল্ব ও সুইস-সকেটের দাম তুলনামূলক কমতে পারে।