স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের পটিয়ার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
দীর্ঘ ৫ বছর পর মঙ্গলবার (৪ মে) একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়ার বহুল প্রতীক্ষিত এ প্রকল্পসহ ১০টি প্রকল্প চুড়ান্ত অনুমোদন দেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত বছর পরিকল্পনা কমিশন থেকে ফেরত আসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি। এরপর প্রকল্পটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। স্থানীয় সাংসদ হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর প্রচেষ্টায় কাটছাঁট করে প্রকল্পটি ফের মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, প্রকল্পটি আজ একনেক সভায় উত্থাপিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বহুল প্রতিক্ষীত এ প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, পটিয়া হচ্ছে একটি দ্বীপের মতো। তিন দিকে নদী-খাল, একদিকে পাহাড়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মেরিন ড্রাইভের আদলে সুরক্ষিত হবে পটিয়া। বন্যা রোধ ও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়াও চাষাবাদের আওতায় আসবে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পটিয়ার চেহারা পাল্টে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পটিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ জলাবদ্ধতা নিরসন, ভাঙনরোধ ও সেচ সুবিধা পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ২২ জুলাই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, প্রধান প্রকৌশলীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেই থেকে প্রকল্পের স্বপ্ন দেখছিলেন পটিয়াবাসী । পটিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আশিয়া, হাবিলাসদ্বীপ, ধলঘাট, বড়লিয়া, দক্ষিণ ভূর্ষি, জঙ্গলখাইন, নাইখাইন, ভাটিখাইন, ছনহরা, কচুয়াই, হাইদগাঁও, কেলিশহর ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবে।
প্রকল্পে যা থাকছে :
প্রকল্পে ২৫ দশমিক ৫১০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে শিকলবাহা, চাঁদখালী ও বোয়ালখালী খালের ডান তীরে ২২ দশমিক ২০০ কিলোমিটার। চাঁনখালী খালের বামতীরে ৩ দশমিক ৩১০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ১১টি খালের ৩০ দশমিক ২০০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। ২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার নদী-খালের তীর সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্পে ২৬টি খালে রেগুলেটর বসানো হবে। ২৬টি খালের রেগুলেটর নির্মাণ করার মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা হবে। ৪ দশমিক ১০০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হবে। চাঁনখালী খালের ডান তীরে ২ হাজার ৩৫০ মিটার, বাম তীরে ৮৫০ মিটার এবং বোয়ালখালী খালের ডান তীরে ৯০০ মিটার। এর মাধ্যমে বর্ষায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল রক্ষা করা হবে। প্রকল্পে একটি সেতুও নির্মাণ করা হবে। খানমোহনা এবং ধলঘাট স্টেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য চাঁনখালী খালের উপর এই সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫৮ দশমিক ৯২৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে ২৫ দশমিক ৫১০ কিলোমিটার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পে বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, দুই পাশে ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ, খালের তীরের যানবাহন চলাচল উপযোগী সড়ক ও ইকো-ট্যুরিজম তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে।