স্টাফ রিপোর্টারঃ
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিতে সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার গর্ভনিং কমিটির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন।
আজ মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে দেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় কামিল ২য় বর্ষের অনলাইন ক্লাসের পাঠদান উদ্বোধনকালে তিনি উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
এ সময় তিনি বলেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর পরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ অভিবাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ধারাবাহিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সে ঘোষণা এখনো বলবৎ রয়েছে।
সরকার জীবন ও জীবিকাকে সমন্বয় রেখে বর্তমানে সবকিছু ধীরে ধীরে খুলে দিতে শুরু করেছে। তাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত শিক্ষাজীবন বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়ার বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া বিমূখ হয়ে পড়েছে। এতে করে ভবিষ্যতে তাদেরকে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া দীর্ঘ সেশনজটে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
সরকারি নির্দেশনায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চালু করা হলেও এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে মনিটরিং করাও সম্ভব নয়। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাসও নিচ্ছে না। এতে করে একপ্রকার বৈষম্যও সৃষ্টি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি ক্লাসের এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীদের যদি পালা করে ক্লাস নেওয়া হয় তাহলে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবেন তারা।
আর যে সকল প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস চালু করেছে দেখা যাচ্ছে যে অনলাইন ক্লাসের একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জীবনের শংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন তাদের অভিবাবকরা। তারা মনে করেন এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিলেও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদেরকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
তাছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল পরীক্ষা অসমাপ্ত রয়েছে সে সকল পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রহণ করা যায় কিনা তার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্যও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন প্রায় সমাপ্তির পথে। হয়তো অনার্স কিংবা মাষ্টার্সের এক দুইটি পরীক্ষা শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে আবার কেউ কেউ বিসিএস কিংবা অন্যান্য পরীক্ষা দিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবে কিন্তু তাদের সব স্বপ্ন ধুলিস্যাত হতে বসেছে।
করোনা শিক্ষার্থীদের সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে একটি মেধানির্ভর প্রজন্মকে আমরা হারিয়ে ফেলবো এবং এতে করে যে শুণ্যতা সৃষ্টি হবে তা সহজে পূরণ হবে না।
তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান আরম্ভ করা যায় তার পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রণয়নের দায়িত্ব প্রদানের আহবান জানান তিনি।
তিনি মাদ্রাসার সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের বর্তমান সরকার প্রদত্ত উন্নত জ্ঞানার্জনের সুবিধা কাজে লাগানোর অনুরোধ জানান।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মুহসিন ভূঁইয়া, উপাধ্যক্ষ মাওলানা মাহবুবুল আলম ছিদ্দিকী, মুহাদ্দিস আনোয়ার হোসেন, মুহাদ্দিস হাফেজ মো. আহমদুর রহমান নদভী, শিক্ষক প্রতিনিধি মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী, নুরুল হুদা, ছাত্র প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম প্রমূখ।