স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজধানীর গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাড়ির (বি-৩) যে ফ্ল্যাটটিতে মোসরাত জাহান মুনিয়া (২১) ভাড়া থাকতেন, সেখানে যাতায়াত ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের। তিনি প্রায়ই ফ্ল্যাটটিতে আসা-যাওয়া করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুনিয়া যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন সেই ভবনের বেশকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেসব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ফ্ল্যাটে সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ পেয়েছে তারা। তবে ঘটনার দিন বা এর আগের দিন মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে এই দুই দিন সন্দেহজনক কারও যাতায়াত ওই বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের আশপাশে পাওয়া যায়নি।
গুলশান থানা সূত্রে জানা যায়, মুনিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বাড়ির মালিক, মালিকের মেয়ের জামাইসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলা সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তারা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলেই অভিযুক্ত আনভীরকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ।
এসব বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমাদের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সিসিটিভি ফুটেজ ওই ভবনের এবং এর আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে নিয়েছি। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের তথ্য পেয়েছি। আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা এসব ফুটেজ সাক্ষ্য হিসেবে নেব।
মুনিয়ার বাসার আশপাশে সন্দেহজনক কারো মুভমেন্ট পাওয়া গেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বাড়ির অনেকগুলো অ্যাপার্টমেন্টে লোকজনের বসবাস আছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ফুটেজে অনেকের গতিবিধি পেয়েছি। কিন্তু কোনো সন্দেহজনক মুভমেন্ট আমরা এখনো পাইনি।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনায় ফ্ল্যাটের মালিক, তার মেয়ের জামাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এছাড়া যিনি ম্যানেজার ছিলেন তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে এগুলো প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ। অফিসিয়ালি জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের বক্তব্য নেওয়ার বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। ওই বাড়ির ম্যানেজার, সিকিউরিটি গার্ড ও গৃহকর্মীদের আদালতের মাধ্যমে অথবা ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হবে।
মুনিয়ার উদ্ধার হওয়া ফোনে পুলিশ কী কী তথ্য পেয়েছে- এই প্রশ্নের উত্তরে গুলশানের ডিসি বলেন, আমরা ভিকটিমের দুটি ফোন সিজ করেছি। এই ফোনগুলো নিয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। তারা এগুলো বিশ্লেষণ করছেন।
মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে কর্তব্যরত চিকিৎসক যারা ছিলেন তারা আত্মহত্যা বলেই মত দিয়েছেন। তবে এটা মৌখিক বক্তব্য; অফিসিয়াল নয়। আর সুরতহাল প্রতিবেদনে ভিকটিমের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার হাতে এবং পায়ে নীল হয়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়া দেখা গেছে। যেহেতু মরদেহটি অনেকক্ষণ ঝুলেছিল তাই এমন হয়েছে। ফাঁস দেওয়ার পর ৬-৭ ঘণ্টা ধরে কোনো দেহ ঝুলে থাকলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তবে কোনো ধরনের ধস্তাধস্তি বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত চলছে
পুলিশ বলছে, এই মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ করেছেন ভিকটিমের বোন। আত্মহত্যার প্ররোচনা এবং প্ররোচনার অভিপ্রায় এই দুটি বিষয়কে প্রমাণ করতে পুলিশ তদন্ত করে যাচ্ছে। দুটি বিষয়কে প্রমাণ করার জন্য পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, ভিকটিমের ডায়েরি, ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করে যাচাইসহ পর্যাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ করছে।
গুলশান থানা সূত্রে জানা যায়,মরদেহের দ্রুত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া মরদেহের ডিএনএ প্রোফাইলিং এবং ফরেনসিক রিপোর্ট করার জন্যও পুলিশের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের অনুরোধ করা হয়েছে। আর এসব বিষয়ের ওপরেই মামলার পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নির্ভর করছে।
প্রমাণের অপেক্ষায় পুলিশ
মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় অভিযুক্ত সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেফতার করার জন্য প্রমাণের অপেক্ষায় আছে পুলিশ। পর্যাপ্ত প্রমাণ পেলেই তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিকটিমকে ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ মামলায় দুটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ; একটি হচ্ছে আত্মহত্যার প্ররোচনা, অন্যটি হচ্ছে প্ররোচনার অভিপ্রায়। এই মামলায় এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং চিকিৎসক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতামত। যখনই আমরা সেই অবস্থায় যেতে পারব, তখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।