স্টাফ রিপোর্টারঃ
সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আয়কর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকরা দেবেন বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। সেইসাথে দুটি গ্র্যাচুইটির বদলে একটি গ্র্যাচুইটি দেয়ার সিদ্ধান্তও বাতিল করেছে উচ্চ আদালত।
বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রোববার (৬ নভেম্বর) এ রায় দেন।
নবম ওয়েজ বোর্ডের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশের সঙ্গে মন্ত্রীসভা কমিটির দেয়া দু’টি সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাসস এমপ্লইজ ইউনিয়নের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুজ্জামান ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।
এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করে আদালত। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
রিটের পক্ষে আইনজীবী সিনিয়র এডভোকেট ড. কাজী আকতার হামিদ রায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।
তিনি বলেন, নবম ওয়েজ বোর্ডের জন্য আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হকের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ নিয়ে এই কমিটি একই বছরের ২৮ অক্টোবর সুপারিশ চূড়ান্ত করে তা দাখিল করে। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নবম ওয়েজ বোর্ড নিয়ে সরকার গেজেট প্রকাশ করে।
প্রকাশিত গেজেটে দেখা যায়, নবম সংবাদপত্র মুজরি বোর্ডের দাখিলকৃত সুপারিশসমূহের সাথে মন্ত্রীসভা কমিটি দু’টি সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে দেখা যায় ওয়েজ বোর্ড কমিটি সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের ওপর আয়কর প্রান্তিক সুবিধা (ফ্রিঞ্চ বেনিফিট) হিসেবে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় বলে সুপারিশ করে।
পাশাপাশি সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণ চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত ২ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্ত হবেন বলে সুপারিশ করেন। কিন্তু নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদের প্রকাশিত গেজেটে দেখা যায়, সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণ তাদের নিজ নিজ আয় হতে আয়কর দেবেন এবং গ্র্যাচুইটি হিসেবে ১ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন বলে মন্ত্রীসভা কমিটি ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশের সাথে তাদের এ দু’টি সুপারিশ যুক্ত করে দেয়। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।
ড. হামিদ বলেন, সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণ এতদিন যাবত তাদের বেতনের বিপরীতে যে আয়কর হয় তা মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ প্রদান করতেন। সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণের আয়ের বিপরীতে যে আয়কর হয় সে অর্থ প্রান্তিক সুবিধা (ফ্রিঞ্চ বেনিফিট) হিসেবে পেয়ে আসছেন। এ বিষয়ে আপিল বিভাগে দেয়া রায়ও রয়েছে।
তাছাড়া বাসস রুলস অনুযায়ী এ সংস্থার সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণ সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত ২ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে পেয়ে থাকেন। মন্ত্রীসভা কমিটির সুপারিশ বাসস রুলসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ড. হামিদ বলেন, একটি বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণ সুবিধা পাচ্ছেন। তা কর্তন করা যথাযথ হয়নি। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতের বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করেছি। রিটে মন্ত্রীপরিষদ সচিবসহ তিনজনকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।
ড. হামিদকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট রেজাউল হক রেজা, দিদারুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মইনুল আহসান।