অনলাইন ডেস্ক:
মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নিয়ে সুদহার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতিতে গাড়ি, বাড়ি, কৃষিঋণসহ সব ধরনের ঋণের সুদহার বাড়ছে
মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নিয়ে সুদহার নির্ধারণে নতু পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতিতে গাড়ি, বাড়ি, কৃষিঋণসহ সব ধরনের ঋণের সুদহার বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নিয়ে সুদহার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতিতে গাড়ি, বাড়ি, কৃষিঋণসহ সব ধরনের ঋণের সুদহার বাড়ছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সুদহার নির্ধারণের নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল সোমবার ব্যাংকগুলোর জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপনে যে পদ্ধতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতির গতিধারা অব্যাহত রাখা ও দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত ব্যাংক কর্তৃক বিতরণকৃত ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে এই নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
নতুন পদ্ধতিতে, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে একটি রেফারেন্স রেট বা ভিত্তি হার নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ভিত্তি হারকে SMART বা ‘সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ নাম দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসের প্রথম কর্মদিবসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এই ভিত্তিহার সূচক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
যে মাসের সুদহার নির্ধারণ করা হবে তার অব্যবহিত আগের মাসের ‘স্মার্ট রেটকে’ ভিত্তি ধরতে হবে। ধরা যাক, মার্চ মাসের সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসের স্মার্ট ভিত্তি হবে।
২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের চাপের মুখে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনে ৯ শতাংশে বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদ কমাতে শুরু করলে ঋণ-আমানতের সুদহার ‘নয়ছয়’ নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ হলে, আমানতে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৬ শতাংশ।
কিন্তু কোভিড মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আর তাই বাজারে অর্থের জোগান কমিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ‘সংকোচনমূলক ও আঁটসাঁট’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়।
কোন ঋণের সুদহার কত
চলতি জুন মাসের ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হার বা ভিত্তিহার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ভিত্তি সুদহারের সঙ্গে বিভিন্ন হারে মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারিত হবে। ঋণ বা বিনিয়োগের সুদ বা মুনাফার নতুন এই হার ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে গাড়ি-বাড়িসহ ব্যক্তিগত, কৃষি, ক্ষুদ্র ঋণসহ সব ধরনের ঋণের সুদহার বাড়বে।
সর্বোচ্চ সুদহার
১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের জুন মাসের গড় সুদহার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করলে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
গাড়ি-বাড়িসহ ব্যক্তি ঋণ
সিএমএসএমই ঋণ ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তি ঋণ ও গাড়ি কেনার ঋণের ক্ষেত্রে উল্লেখিত সুদহারের সঙ্গে অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ বা তদারকি মাশুল যুক্ত হবে। ফলে এই ক্ষেত্রে সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এই মাশুল বছরে একবার আদায় করা যাবে এবং এর ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে মাশুল বা সুদ আরোপ করা যাবে না। তবে হিসাব বছরের মধ্যবর্তী সময়ে কোনো ঋণ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে আনুপাতিক সময়ের জন্য তদারকি মাশুল আদায় করতে পারবে ব্যাংক।
কৃষি ও পল্লি ঋণ
ভিত্তি সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ করে কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। ফলে কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদহার হবে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। বর্তমানে কৃষিঋণে সুদহার ৮ শতাংশ। অন্য ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ।
বিশেষ তহবিল ও কার্ড ঋণ
বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বা বিশেষ তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত বিদ্যমান নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। এর ফলে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার আগের মতো ২০ শতাংশ বহাল থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উল্লিখিত পদ্ধতিতে সুদহার পরিবর্তনের ফলে গ্রাহকের ঋণের প্রদেয় কিস্তির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে কিস্তি পুনর্নির্ধারণের আগে অবশ্যই গ্রাহককে অবহিত করতে হবে।
ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো স্মার্টকে ভিত্তি ধরে ওপরে বর্ণিত হারে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মার্জিন যোগ করে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার হার নির্ধারণ করবে। এ ছাড়া তদারকি মাশুলও আদায় করতে পারবে।
চলমান চর্চা অব্যাহত রেখে ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট মাসের ৭ তারিখের মধ্যে উক্ত মাসের ঘোষিত সুদহার বিবরণী ওয়েব পোর্টাল ও এন্টারপ্রাইজ ডেটা ওয়ারহাউসে (এইডিডব্লিউ) আপলোড করবে।
নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাসের জন্য নির্ধারিত সুদহার কার্যকর হবে। স্থির বা পরিবর্তনশীল- যে ধরনেরই হোক না কেন ঋণ দেওয়ার আগে গ্রহীতার সম্মতিক্রমে সুদহার নির্ধারিত করতে হবে। তবে পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সুদহার ৬ মাস পরপর পরিবর্তন হবে। উদাহরণস্বরূপ ১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে নতুন ঋণ দেওয়া হলে পরিবর্তনশীল সুদহার ১ জুলাই ২০২৪ তারিখে পরিবর্তনযোগ্য হবে।
আজ মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠিয়েছে।