স্টাফ রিপোর্টারঃ
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা থেকে সরে এলেন তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি রুবানা হক। করোনাভাইরাসের মহামারীতে কার্যাদেশ কমে গেছে। এ অবস্থায় পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করা সম্ভব নয়; রাখা সম্ভব নয় সব শ্রমিককে, বাড়তি শ্রমিক জুন মাস থেকে ছাঁটাই শুরু হবে- এ ঘোষণা তিনি দেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। শেষে বাধ্য হয়ে তিনি ঘোষণা দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অবস্থান বদলান।
বিজিএমইএ থেকে ৬ জুন এক ঘোষণায় বলা হয়, ৪ জুন সভাপতি রোমানা হক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সচিব মেজর অব. মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়নি। সংগঠনটির সভাপতি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি। সংগঠন হিসেবে এ ধরনের ঘোষণা দেওয়ারও কোন সুযোগও নেই। বিজিএমইএ সভাপতি কর্মসংস্থান হ্রাস পাওয়া এবং সম্ভাব্য শ্রমিক ছাঁটাই বিষয়ে তার গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ তার বক্তব্য পুনরায় তুলে ধরে।
বিজিএমইএ’র বিবৃতিতে রুবানা হকের যে বক্তব্য তুলে ধরা হয় তা হচ্ছে, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই ২০১৯-এপ্রিল ২০২০) পোশাক শিল্পে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৪ শতাংশ, যা শিল্পে গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। ১ মে-২০ মে এর মধ্যে শিল্পে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৫৫.৭ শতাংশ। গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে। পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজারগুলো কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে অনেক বড় বড় ক্রেতা দেউলিয়াত্বও বরণ করেছে। চলমান পরিস্থিতিতে প্রকৃতপক্ষে কোনও কারখানাই সামর্থ্যরে শতভাগ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচল রেখেছে, এমন ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলোও ৬০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না।’
বিজিএমইএর ব্যাখ্যায় বলা হয়, আমরা শিল্প গড়ি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। আজকের এই বাস্তবতা আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্যও নির্মম। এখানে দুটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ১) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহজ শর্ত ঋণের ৫ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা এমএফএস অ্যাকাউন্টে দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ্য, এ পোশাক খাত প্রতি মাসে মজুরি পরিশোধ করে থাকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার। ২) সমস্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কারখানা বন্ধ বা সামর্থ্য কমে যাওয়ার (ক্যাপাসিটি রিডাকসন) প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে বিজিএমইএ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শুধুমাত্র পোশাক খাতই নয়, সকল খাতেই কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে।
বিবৃতিটিতে বলা হয়, বিজিএমইএ একান্তভাবে আশা করে, কোনো কারখানা যদি উপরোক্ত পরিস্থিতির শিকার হয়ও, তথাপি মালিক ও শ্রমিক উভয়ই শ্রম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। বিজিএমইএ একান্তভাবে আশা করে, উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে শিল্পের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকের স্বার্থে বিজিএমইএ’র বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপিত হবে এবং এ কঠিন সময়ে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে শিল্পের পাশে দাঁড়াবেন।
বিজিএমইএ সভাপতি শ্রমিকদের আন্দোলনমুখী প্রতিক্রিয়ার কারণে আগের অবস্থান পরিবর্তন করেন-তা তাদের এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। ‘গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠনের সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন।
বিজিএমইএ এর সভাপতির এ ধরণের বক্তব্যকে চৈতন্যদ্বয় বলে মনে করেন জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, বিজিএমইএ সভাপতি যে ভুল বুঝতে পেরেছেন এ জন্য তাকে ধন্যবাদ। করোনা মহামারি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে; এ শিল্পের উদ্যোক্তাও অক্লান্ত পরিশ্রম করছে তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন ধরে রাখার জন্য। আমরাও চাই এ উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক। তৈরি পোশাক শিল্প কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হোক-আমরা তা চাই না, শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়–ক- সেটাও আমরা চাই না। বিজিএমইএ শ্রমিকদের সাথে নিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাক, সেটাই আমাদের কাম্য।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মোশরেফা মিশু বলেন, শ্রমিক ছাটাইয়ে অবস্থান থেকে বিজিএমইএ এসেছে বলে মনে হলেও তারা শ্রমিক ছাটাই বন্ধ করবে বলে মনে হয় না। এখনো সারা দেশে শ্রমিক ছাটাই হচ্ছে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে যদি শ্রমিক ছাটাই বন্ধ না হয়, যদি শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ না করে দেয়া হয় তাহলে এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জবাব দেবো।