স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে আগুনের ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। আর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, এই অগ্নিকাণ্ডে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আরও একজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে আমি দ্রুত হাসপাতালে চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত আসতে বলেছেন। এখানে এসে যা দেখলাম তা ভয়াবহ। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপর দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বেঁচে আছেন তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আহতরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। বাইরে কেউ আছেন কিনা এখনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢামেক ১৪ জন এবং বার্নে ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তারা গুরুতর অবস্থায় আছেন।’
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয় ৪২ জনকে। তাদের মধ্যে চার শিশু ও ২১ নারী ছিলেন। বাকিরা পুরুষ। এ ছাড়া জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের আরও জানান, বেইলি রোডের ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৩ জন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন ১০ জন।
ঢামেক পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এখন যাদের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই গুরুতর আহত। আগুন নেভানোর পর সাফোকেশনের ফলে অনেকের শ্বাসরোধ হচ্ছে।’
যারা আগুনে না পুড়েও বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে আনা হচ্ছে। অধিকাংশই লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিজভী আহমেদ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ভবনে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার সংবাদ আসে ফায়ার সার্ভিসের কাছে। এরপর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ভবনটিতে তল্লাশি চালান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাত আড়াইটা নাগাদ তারা ভবনটি ছেড়ে যান। এসময় ঘটনাস্থলে দেখা যায়, আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো একে একে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছে। আর ভবনটির সামনে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। ভবনটির সামনে অবস্থান করছেন পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। এছাড়া ঘটনাস্থলে একাধিক অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে।
উপস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, তল্লাশি শেষে সিলগালা করা হয়েছে ভবনটি। এখন ভবনটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এছাড়া এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিষয়টি বাংলা টিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাজাহান শিকদার।