স্টাফ রিপোর্টারঃ
করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফেরাতে চায় সরকার। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ রাখতে চায় ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণের। এ জন্য আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য ঠিক রেখেই আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে শুক্রবার থেকে এ বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে; যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বছরজুড়েই সরকারকে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ঘাটতি হিসাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট সমাপনী অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের সর্বসম্মত কণ্ঠভোটে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়।
এই বাজেট কার্যকরের ফলে বাড়তি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে একদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যেমন নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে, অন্যদিকে করদাতাদের ওপর বাড়তি করারোপের একটা চাপও তৈরি হবে। যে কারণে কোনো ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা ক্রয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে, আবার সেটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম দামেও পাওয়ার পথ তৈরি হবে।
এ ক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য ও সেবামূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অর্থমন্ত্রী বাজেট পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়েছেন আয় বাড়ানোর নানা পরিকল্পনা। এ জন্য বিভিন্ন রকম কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ পণ্য ও সেবা সহজলভ্য রাখতে উৎপাদন বাড়িয়ে সরবরাহ বাড়াতে রেখেছেন এ-যাবৎকালের সর্বোচ্চ প্রণোদনা ও ভর্তুকি ব্যয়ের পরিকল্পনা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ জুন সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর অধিবেশনজুড়ে সংসদ সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। করোনা মহামারির গত দুই বছর পর সংসদ সদস্যদের স্বশরীরে উপস্থিতি এবং প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দীর্ঘ আলোচনা এবারই প্রথম।
প্রস্তাবিত বাজেটে পাচার হওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার ক্ষেত্রে যে সুযোগ রাখা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কেউ ঘোষণা দিয়ে নগদ অর্থ আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আনার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রায় মাসব্যাপী আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয়ের আকারসহ অন্যান্য মৌলিক ইস্যুতেগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
ফলে বাজেটের সমাপনী অধিবেশনেও ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় করা হবে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
এবার অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে মূল লক্ষ্য হলো করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারায় প্রত্যাবর্তন। সেই লক্ষ্যে এই বাজেটের মূল নজর হচ্ছে অর্থনীতির সব খাতে সক্ষমতার উন্নয়ন। এ জন্য এই বাজেটে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশের সমান।