স্টাফ রিপোর্টার:
বিমানের নতুন দুটি উড়োজাহাজ উদ্বোধন করে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থার নতুন দুই ড্রিমলাইনার সোনার তরী ও অচিন পাখি উদ্বোধন করেন তিনি। পরে তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ভিত্তিস্থাপন করেন। বিমানের মোবাইল অ্যাপও তিনি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বিমান কেনা না, এটা যেন যথাযথভাবে চলে এবং বিমানের যাত্রীসেবা বাড়ানোর সাথে সাথে রক্ষণাবেক্ষণেও সকলের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
বর্তমানের সঙ্গে অতীতের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের পূর্বে যদি ঢাকা এয়ারপোর্টের কথা কারো স্মরণ থাকে… একটু চিন্তা করে দেখবেন যে, সেটা কী ধরনের অতি সাধারণ একটা এয়ারপোর্ট! বোর্ডিং ব্রিজ বা কোনো কিছুই ছিল না। একটা মাত্র সিঁড়ি। গাড়িতে নেমে ওখানে দোতলায় উঠে আবার নিচে নেমে হেঁটে প্লেনে উঠতে হত। আর বিমান বহরে যেগুলো ছিল, এমনই ঝরঝরে। আমি যখন প্লেনে যেতাম, ঝর ঝর করে পানি পড়ত। তোয়ালে, টিস্যু দিয়ে বন্ধ করতে হত।
এন্টারটেইনমেন্টের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। বিমানের এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার জন্য ওই সময় দেশ পরিচালনাকারীদের দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, দোষটা ছিল আমাদের এখানেই, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তাদেরই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর গত ১০ বছরে বিমানবন্দরের উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের বিমানের নিজস্ব কোনো কার্গো বিমান নেই। কাজেই কার্গো বিমান আমাদের প্রয়োজন। থার্ড টার্মিনালের সাথে অত্যন্ত আধুনিক কার্গো ভিলেজ হবে। তাতে আমাদের মালামাল প্রেরণ করা, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসা সেগুলোও অনেক বেশি সুবিধা হবে। ভবিষ্যতে আমরা দুটি কার্গো বিমান ক্রয় করব। কারণ কার্গো ছাড়া বিমান লাভজনক হবে না।
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করতে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য তিনটি উড়োজাহাজ আসছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি যারা বিদেশে কাজ করেন, তাদের যেন কোনো রকম হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মাবলী সবাইকে মেনে চলারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যখন বিদেশে যান, তখন ঠিক যেভাবে এই নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেইভাবে সবাইকে সেটা মেনে নিতে হবে। সেখানে কেউ কোনো বাধা দিতে পারবেন না। আর যদি কেউ এক্ষেত্রে বাধা দেন, তাহলে ভবিষ্যতে আর বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে। অন্তত আমি সেটা করব। একটা কথা মনে রাখবেন। আসলে আমার তো আর কোনো কাজ নাই। সারা দিন আমি দেশের কাজই করি। কাজেই কোথায় কী হয় না হয়, টুকটাক খোঁজখবরগুলো নেওয়ার চেষ্টা করি। কাজেই অনিয়ম বা ব্যত্যয় ঘটাতে গেলে সাথে সাথে আমার কাছে কিন্তু খবরটা চলে আসে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিকূল অবস্থায় নিজের রাজনীতিতে আসার কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন যেভাবে আমার পিতা চেয়েছিলেন আমি সেভাবে করতে চাই। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দুর্নীতি করবে তাদের কিন্তু ছাড়া হবে না। সে যেই হোক না কেন।