নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি পূজামণ্ডপ সাজানো হয়েছে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া শাড়ি দিয়ে৷ পাশাপাশি ব্যতিক্রমি এই মণ্ডপে সজ্জার কাজে প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত বস্তুর বদলে ব্যবহার হয়েছে পরিবেশবান্ধব পাটখড়ি৷
শহরের টানবাজার সাহাপাড়ায় এই দুর্গাপূজার আয়োজকরা বলছেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মণ্ডপটির চারপাশ সাজানো হয়েছে নানা রঙের কাতান শাড়ি দিয়ে। এ ছাড়া শাড়ি ও পাটখড়ি ব্যবহার করে চারদিকে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন বয়সী নারীর অবয়ব৷
সমাজে নিপীড়িত ও অবহেলিত নারীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতেই এবারের দুর্গাপূজার সাজসজ্জায় নারীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আয়োজকরা।
টানবাজার সাহাপাড়া নতুন পূজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুমন সাহা বলেন, “এ বছর আমাদের কমিটির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী৷ এ কারণে ভিন্নধর্মী কিছু করার কথা ভাবছিলাম৷ বঙ্গবাজারের ট্র্যাজেডির পর আমাদের মাথায় ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা এলো৷
“সিদ্ধান্ত নিলাম, তাদের পুড়ে যাওয়া কাপড় যেগুলো সাধারণত বিক্রি হবে না, সেগুলো আমরা কিনে নেবো এবং তা দিয়ে মণ্ডপ সাজাবো৷”
তিনি জানান, মণ্ডপের সজ্জায় অন্তত ৩০০টি শাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে৷ প্রতিটি শাড়িরই বিভিন্ন স্থানে পোড়া ছিল৷ এসব শাড়িকে মাপমতো কেটে নান্দনিক এক সজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
পূজা কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, প্রতিবছরই ভিন্ন থিম ও সজ্জা থাকে এ মণ্ডপে৷ বিগত কয়েক বছর ধরে এ মণ্ডপের সজ্জায় প্লাস্টিকজাত বস্তুর ব্যবহার যথাসম্ভব বর্জন করা হয়।
“মণ্ডপসজ্জায় পরিবেশবান্ধব ও সহজে পচনশীল প্রাকৃতিক উপাদান যেমন, সুতা, বাঁশ, মাটির তৈরি পাত্র, কাগজের তৈরি ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ গতবছরও পাটের তৈরি বিভিন্ন বস্তু দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়৷”
আয়োজকরা সচেতনভাবে সজ্জায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার না করে অন্যদেরও প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছেন বলে জানান সুমন৷
তিনি বলেন, “প্রায় সব পূজা মণ্ডপেই ককশিটের ব্যবহার করা হয়, যা এক ধরনের প্লাস্টিক৷ পূজা শেষে এগুলো ফেলতে গেলে আমরা মুশকিলে পড়ি৷ এসব ভেবেই গত ৭-৮ বছর যাবৎ আমরা পরিবেশের দিকে নজর রেখে ককশিটের ব্যবহার এড়িয়ে যাচ্ছি।
“আমরা সাধারণত প্রাকৃতিক বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করি৷ অনেকেই এখন প্লাস্টিকের ব্যবহারে সচেতন হচ্ছেন, এটা ভালো দিক৷”
পূজা কমিটির আরেক যুগ্ম সম্পাদক সৌরভ সাহা বলেন, “অশুভ প্রতীক হওয়ার ধারণা থেকে সাধারণত পূজা মণ্ডপের সাজে কালো রঙ ব্যবহার করা হয় না। তবে বঙ্গবাজারের সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করে আমরা সজ্জায় কালো রঙের শাড়িও ব্যবহার করেছি।”
মণ্ডপের সজ্জায় নারীর প্রাধান্য নিয়ে সৌরভ আরও বলেন, “আমরা দেবী দুর্গার পূজা করি, তাই আমরা বিশ্বাস করি, নারী শক্তির আরেক রূপ। তবুও আমাদের সমাজে নারীরা অবহেলিত ও লাঞ্ছিত। এ কারণে এবার আমরা মণ্ডপ সাজিয়েছি নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে।
“সবার কাছে নারীশক্তির বার্তা পৌঁছে দিতে চাই আমরা। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার আহ্বান থাকবে এ সজ্জার মধ্য দিয়ে।”
এ বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২২৪টি পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন৷
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন, পূজা উপলক্ষে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷