স্টাফ রিপোর্টারঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশজুড়ে একদিনে ৮০ লাখ ডোজ করোনা টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এদিন ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের ৪৪৩টি ওয়ার্ডে সকাল ৯টা থেকে একযোগে টিকাদান চলবে। এ লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চলমান করোনা টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি ‘বিশেষ এই কর্মসূচি’ চালানো হবে।
এছাড়া প্রতি মাসে নিয়মিত প্রায় ২ কোটি টিকা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আগে সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে মডার্নার টিকা দেওয়া হলেও এবার সেগুলোতে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে। তবে নিবন্ধন করেও যারা এখনো টিকা পাননি তারা বিশেষ করে বয়স্করা অগ্রাধিকার পাবেন। শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলেও এই ক্যাম্পেইনে টিকা দেওয়া হবে। এদিকে আজ সোমবার ২৫ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা দেশে আসছে।
গতকাল রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা এর আগেও ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করেছিলাম। এবারও ২৮ সেপ্টেম্বর এই ক্যাম্পেইন চলবে। এদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। সেজন্য এদিন ক্যাম্পেইন শুরু করছি। বর্তমানে প্রতিদিন যে ৬ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে তাও চলবে। গ্রামেগঞ্জে আমরা টিকা নিয়ে যাচ্ছি। যারা দূরে থাকেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বয়স্ক এবং যারা সব সময় টিকা নিতে আসতে পারেন না তাদের টিকার আওতায় আনাই উদ্দেশ্য।’
বিশেষ এই কর্মসূচির আওতায় কারা টিকা পাবেন জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তারা। তবে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে নারী-পুরুষ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা অগ্রাধিকার পাবেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি বুথ, পৌরসভায় একটি ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডে তিনটি করে বুথ থাকবে। টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেবেন ৩২ হাজার ১০৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। পাশাপাশি ৪৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা করবেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে জানান, গণহারে শুরু হতে যাওয়া এই টিকা কর্মসূচিকে আমরা গণটিকা বলছি না। তবে ব্যাপক আকারে আমরা এই টিকা দেব। টিকা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১ কোটিসহ প্রতি মাসে নিয়মিত প্রায় ২ কোটি টিকা দেওয়া হবে।
মহাপরিচালক বলেন, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ আছে এবং আমরা সামনের দিনগুলোতে প্রয়োজনীয় টিকা পাওয়ার উৎস নিশ্চিত করেছি।
স্পট রেজিস্ট্রেশনে ষাটোর্ধ্বদের টিকা প্রয়োগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সপ্তাহের নির্দিষ্ট একদিন নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্পট রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে আজ সোমবার ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি আরও ২৫ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা দেশে আসছে। ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি কার্গোবাহী উড়োজাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে টিকার এই চালান নিয়ে সোমবার রাত সোয়া ১০টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় এই টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ কর্মকর্তারা টিকার চালান বুঝে নিতে বিমানবন্দরে থাকবেন।
কোভ্যাক্সের আওতায় গত ৩১ মে প্রথম চালানে ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা বাংলাদেশে আসে। ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় চালানে আসে আরও ১০ লাখ ৩ হাজার ৮৬০ ডোজ টিকা। ২১ জুন দেশে ফাইজারের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, শনিবার পর্যন্ত ২ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ।