স্টাফ রিপোর্টার:
ইতোমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেটির অভিমুখ এখন বাংলাদেশের দিকে এবং এটি আরো শক্তি অর্জন করে শুক্রবার (২৪ মে) রাতে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার (২৪ মে) আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের অংশ জুড়ে নিম্নচাপটির অবস্থান। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। বাংলাদেশ উপকূলের সুন্দরবন ও খেপুপাড়ার দিকে এর গতিপথ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে যেই অবস্থান দেখাচ্ছে তাতে কেন্দ্রটিই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা আছে। এটিই যতই অগ্রসর হবে ততই ভারী বর্ষণ দেখা দেবে।
নিম্নচাপটি শুক্রবার দুপুরে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর দুটি থেকে যথাক্রমে ৭৩০ এবং ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এছাড়া, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল।
অধিদপ্তরের পরিচালক জানান, এখনো ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হলেও, ২৬ তারিখ রোববার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণনকেন্দ্রের বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্র ওইদিন সকালেই উপকূলের কাছাকাছি চলে আসবে এটি।
তিনি বলেন, যে মডেলগুলি আমরা চালাচ্ছি, তাতে দেখতে পাচ্ছি সিভিয়ার সাইক্লোনের সম্ভাবনা আছে উপকূলের কাছাকাছি এলে। যদি গতি ধীর হয়ে যায় বা বেড়ে যায় তাহলে এই সম্ভাব্য সময় ও স্থান পাল্টে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর গতিপথ এবং ব্যাপকতা সম্পর্কে আরো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্ষা মৌসুম শুরুর ঠিক আগে আগে আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকে। ফলে এই সময় কোনো ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে তার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। ফলে, নিম্নচাপ যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, বায়ুতাড়িত জ্বলোচ্ছাস, দমকা ও ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, নিম্নচাপ না হওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হবে কি না বা এর গতিপথ কেমন হবে তা বলা যায় না। নিম্নচাপে পরিণত হলেই স্পষ্টভাবে লোকেশন বলা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া। নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, এটি বাংলাদেশের উপকূলমুখী।
এদিকে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ৩টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকবর্তী এলাকায় সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য সতর্কতাও জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। জানানো হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, শুক্রবার খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টিপাত হলেও দেশের অন্যান্য জায়গায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাছাড়া, নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের ১৪টি জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে বলেও জানানো হয়েছে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, শনিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। আটটি বিভাগেই অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে আরও বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায়ই অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে। রবিবার থেকে পরবর্তী পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।
উল্লেখ্য, এই নিম্নচাপ যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তবে এর নাম হবে ‘রেমাল’। নামটি ওমানের দেওয়া। এর অর্থ ‘বালু’।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপারসাইক্লোন’।