স্টাফ রিপোর্টারঃ
ধর্ষণের ভিকটিমকে আদালতে হেনস্তার হাত থেকে রেহাই দেওয়ার বিধান সংযুক্ত করে সাক্ষ্য আইনের ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২২’ পাস করেছে সংসদ।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্বে সংসদের ২০তম অধিবেশনে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সংসদে স্থিরকৃত আকারে বিলটি পাস হয়। এর আগে সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। পরে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনের ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগকারীকে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করার ১৫৫ (৪) ধারাটি বিলে বিলুপ্ত করা হয়েছে। ওই ধারায় উল্লেখ ছিল, ‘কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। ’
সাক্ষ্য আইনের ১৪৬(৩) ধারায় বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করার জন্য সাক্ষীর চরিত্রকে আঘাত করতে পারে, সংশোধিত সাক্ষ্য আইনে ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।
উদ্দেশ্যে ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য চিহ্নিতকরণ ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ, প্রমাণের দায়ভার, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি ও আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপনসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণ করার লক্ষ্যে ‘এভিডেন্স এ্যাক্ট ১৮৭২’ প্রণয়ন করা হয়।
১৫০ বছর আগে প্রণীত আইনটি বর্তমান সময়ে কার্যকরভাবে প্রাসঙ্গিক হলেও বিচারব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশন একটি নতুন বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতার নিরিখে আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।
এমতাবস্থায়, ‘এভিডেন্স (এমেন্ডম্যান্ট) এ্যাক্ট ২০২২’ -এর মাধ্যমে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক পদার্থ বা বস্তুসমূহকে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করে তার গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিধান এ আইনে সংযোজন করা হয়েছে। এই সংশোধনী আইন বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে বিচারকার্য নিষ্পত্তি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে জেরাকালে তার চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে, যা নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর ও ‘আইনের চোখে সমতা’ নীতির পরিপন্থী।
এমতাবস্থায়, সংশোধিত আইনের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা-সম্পর্কিত বিদ্যমান আইনের ১৫৫ ধারার উপধারা (৪) বিলুপ্ত করা হয়েছে।
অপরদিকে, মামলার জেরাকালে কেবল আদালতের অনুমতি নিয়ে ন্যায়বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা মামলার ভিকটিমকে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করার বিধান ১৪৬ ধারায় সংযোজন করা হয়েছে।