স্টাফ রিপোর্টার:
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুসারে প্রথম দফায় ৪৭ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলি করা হচ্ছে। গতকাল রোববার এ বিষয়ে সম্মতি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদিকে বদলি-সংশ্লিষ্ট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের কারণে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি পুলিশ অধিদপ্তর।
এ কারণে বদলির প্রস্তাব পাঠানোর সময়সীমা ৫ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আরও তিন দিন বাড়িয়ে ৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে ইসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তালিকা পাওয়ার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে ইসি।
এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওসির সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এখনো চূড়ান্ত তালিকা আমরা পাইনি। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যেই পেয়ে যাব। ৮ ডিসেম্বরের আগেই তা ইসিতে পাঠাতে পারব ইনশা আল্লাহ।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওসি রদবদলে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ লেনদেন হচ্ছে। ইসির নির্দেশনায় শাপেবর হয়েছে বদলিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের। কাঙ্ক্ষিত থানায় পদায়ন পেতে বড় অঙ্কের লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বনিবনা না হওয়ার কারণে ওসিদের তালিকা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। এর আগে যাঁরা তদবির ও অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত থানায় পোস্টিং নিয়েছেন, তাঁরা ইসির বদলির নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করার চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথবা তাঁরা সমগুরুত্বের থানায় পোস্টিং পেতে চাপ দিচ্ছেন।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় ইসি সচিবালয়। এতে বলা হয়, সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য ইউএনওদের পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য ইসি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনও বর্তমান কর্মস্থলে এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসিতে পাঠাতে হবে।
একইভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব থানার ওসিকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ওসির বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাঁদের অন্য জায়গায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
চিঠি পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, সোমবার (আজ) থেকে ইউএনওদের বদলির প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর ধারাবাহিকতায় প্রথম দফায় ৪৭ জন ইউএনও বদলি হচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন ইউএনও ঢাকা বিভাগে থেকে বদলি হচ্ছেন।
এসব উপজেলা হলো ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ সদর, ভৈরব, পাকুন্দিয়া, ঢাকার সাভার ও ধামরাই, নারায়ণগঞ্জের বন্দর, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর ও কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ফরিদপুরের ভাঙা ও নরসিংদীর রায়পুরা।
চট্টগ্রাম বিভাগের আট উপজেলা হলো রাঙামাটি সদর ও রাজস্থলী, বান্দরবানের লামা, খাগড়াছড়ির পানছড়ি, কক্সবাজারের পেকুয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর ও চাঁদপুরের হাইমচর। ময়মনসিংহের ছয় উপজেলা হলো ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও তারাকান্দা, জামালপুর সদর, শেরপুর সদর এবং নেত্রকোনার আটপাড়া ও মোহনগঞ্জ।
সিলেট বিভাগের ছয় উপজেলা হলো হবিগঞ্জের বাহুবল ও চুনারুঘাট, সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও ওসমানীনগর এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর। রাজশাহী বিভাগের ছয় উপজেলা হলো নওগাঁর বদলগাছী ও সাপাহার, জয়পুরহাট সদর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ এবং পাবনার ভাঙ্গুরা ও সাঁথিয়া।
খুলনা বিভাগের চার উপজেলা হলো চুয়াডাঙ্গা সদর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, সাতক্ষীরা সদর ও যশোরের ঝিকরগাছা। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম সদর ও পঞ্চগড়ের আটোয়ারী এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল সদর ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। এবারের সংসদ নির্বাচনে ২৯টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে ২ হাজার ৭১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। যা যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন ছিল আজ।