স্টাফ রিপোর্টারঃ
টাকা উদ্ধার দুদকের কাজ নয়, আইনেও তাদের সে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, বড় দুর্নীতির মামলাগুলোর আইনি প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অর্থ পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের রক্ষায় সুবিধা পাচ্ছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন বনাম মো. জহিরুল ইসলাম এবং অন্য’ শিরোনামে একটি মামলার রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৪ জানুয়ারি এ রায় দেন। ৭২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, টাকা পুনরুদ্ধারে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যায় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি অর্থ আত্মসাৎ বা পাচার করেছেন। তার মানে এটা বলা যাবে না যে টাকা উদ্ধার হলেই অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মামলার পর অনেক ক্ষেত্রে বছর পার হলেও দুদক অভিযোগপত্র বা অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে পারেনি, যা স্পষ্টত আইনের লঙ্ঘন। তা ছাড়া বিশেষ বিধান থাকা সত্ত্বেও এমন অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
২০১৮ সালের ২৬ জুলাই কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মমিনুর রহমান ও সহকারী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলামকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০১৯ সালে জহিরুল ইসলাম মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। রংপুরের বিশেষ জজ আদালত একই বছরের ১২ জুন আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে অব্যাহতি দেন। এর বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে আবেদন (রিভিশন) করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে অব্যাহতির আদেশ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট গত ২৪ জানুয়ারি রায় দেন। এই রায়ে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে আইন অনুসারে মামলার বিচারকাজ শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায়ে আদালত বলেন, দুর্নীতি করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অনেক সরকারি দপ্তরের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার অনুসন্ধান, তদন্তের পাশাপাশি বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করার ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে দুদক থেকে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। প্রশ্ন ওঠে, কমিশন কি আইনের ঊর্ধ্বে? এর উত্তর হচ্ছে অবশ্যই ‘না’। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও ২০০৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালায় কমিশনের কার্যক্রমের বর্ণনা আছে। কমিশন এমন কোনো ক্ষমতার চর্চা করতে পারে না, যা ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও ২০০৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালায় দেওয়া হয়নি।
রায়ে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে ও দক্ষতার সঙ্গে মামলা পরিচালনার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কমিশনের অনুসন্ধান বা তদন্তের বিষয়ে উল্লিখিত সময়সীমা ও পদ্ধতিতে অবিচল থাকার বিষয়টি কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত। তাহলে দুর্নীতির পাশাপাশি দুর্নীতির চর্চা বন্ধ ও নির্মূল হবে।