স্টাফ রিপোর্টারঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, দেশের জনগণের দুর্ভোগ লাঘোবের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তার সরকার। যদিও বিরোধী দলগুলো রাশিয়া-ইউক্রেইনের যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের সুযোগ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে।
তিনি বলেন, ‘যখন দেশ একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে, তখন আমি আমাদের বিরোধী দলের মাঝে ওই উদ্বেগ দেখছি না। বরং, তাদেরকে এই সংকটজনক অবস্থার ফায়দা নিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যায়, সে চেষ্টাই করতে দেখা যায়। এটা কি ঠিক?’
বুধবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের একটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় দেশে রাজনেতিক ঐক্য শুধু মুখে বললে হবে না, নিজে থেকেই পাশে দাঁড়াতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাস করি, যারাই আসবে, আমরা একসঙ্গে কাজ করবো, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মুজিবুল হক চুন্নু তার প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আহবান জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কী না জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন ? আমার প্রশ্ন এখানেই ? দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে, তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছেন- আমি সকলের কথাই বলছি- তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি, এই সুযোগে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটা করাটা কী সমীচীন হচ্ছে ? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা তো থাকতে হবে দেশের জন্য। দেশপ্রেমটাও থাকতে হবে।
মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন করেছিলেন যে- বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংটক মোকাবিলায় সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা। শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলোর ব্যাপারে বলেন, তাদের মধ্যে এ ধরনের অনুভূতি দেখা যায় না। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে এবং দেশের জন্য অনুভূতি থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘যখন বিশ্বব্যাপী এ ধরনের একটি সংকট চলছে, তখন আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং ঘোলা পানিতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময়ে ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন, তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। এতে কোন সন্দেহ নেই। সংসদ নেতা বলেন, ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়নটা করি, কোন এলাকাটা আমাদের ভোট দিলো বেশি, আর কোন এলাকা দিলো না- সেটা বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুট চালও দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি। তবে আমরা সবসময়ে ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। এতে কোন সন্দেহ নেই।
বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এজন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোঁজা হয়, ধরা হয়। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সব সময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এভাবে কোন না কোনভাবে পন্য লুকিয়ে রেখে মুল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই যখন বিশ্বব্যাপী অবস্থা, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সংসদ সদস্য হিসেবে কী করা উচিত সেটাই বলা দরকার। আর যে পত্রিকা, এবং যে প্রতিষ্ঠান, ওদের সবাইকে আমার খুব ভাল চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপার ভাষায় বলতে হয়, একটা প্রতিষ্ঠান আছে, তার প্রধানকে মতিয়া আপা একটা নাম দিয়েছেন, আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন সেনাপ্রিয়। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে মূল্য বাড়ে, এটাই বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি, জনগণের সঙ্গে থাকব। তারা যেটা বলছে, বলতে দিন। দেশের মানুষের কল্যাণে আমার যেসব কাজ, সেগুলো আমি করে যাব।
গণফোরামের দলীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার চরম আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য দেশের জনসাধারণের জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে ও দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাজারে খাদ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ-বছরে জি টু জি পদ্ধতিতে ৫ লাখ ৩০ হাজার মে. টন চাল এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার মে. টন গম আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। আমদানির লক্ষ্যে ঋণপত্র খোলা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে এসকল চাল ও গম দেশে প্রবেশ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সরকারি গুদামে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। নিরাপদ খাদ্য মজুদ গড়ার মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান সচল রাখার প্রয়াসে ২০২২-২৩ অর্থ-বছরে অভ্যন্তরীণভাবে ২২ লাখ ৯০ হাজার মে. টন চাল ও ১ লাখ ৫০ হাজার মে. টন গম সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক নানারকম দুর্যোগ মোকাবেলা করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।