স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিদায়ী কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চাকরিকে ইবাদত মনে করেছি। চাকরি জীবনে কোথাও থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২’ উপলক্ষে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে উদ্দেশ্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুরো চাকরি জীবনে আপনার যে আশীর্বাদ মাথার ওপরে ছিল তা কখনো ভুলবো না। চাকরিটাকে ইবাদত মনে করেছি, চাকরি জীবনে কোথাও থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ভালোভাবে চলতে আপনি পেছন থেকে যে সাপোর্ট দিয়েছেন, সেজন্য আপনাকে আলাদাভাবে স্যালুট ও শ্রদ্ধা।
তিনি বলেন, আইজিপি হিসেবে যাকে বেছে নিয়েছেন, তিনি ভালো করবেন। এ আস্থা আমার রয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। যতক্ষণ শ্বাস আছে, যতক্ষণ আশা আছে, ততক্ষণ পুলিশ বাহিনী লড়াই করবে।
এর আগে কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ে কমিশনার বলেন, আমি ডিএমপি কমিশনার হওয়ার পাঁচ-ছয় মাস যেতেই মহামারি এসেছে। সে সময় বিধি-নিষেধের কারণে স্বাভাবিক সভা-সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য আমি খুব বেশি কিমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য কাজ করতে পারিনি। তারপরও চেষ্টা করে গেছি এলাকার মানুষ নিয়ে কাজ করার জন্য।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদকের মতো সামাজিক সমস্যা রোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আগে এসব সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে আলাদা আইন ছিল না। পর্যায়ক্রমে যখন অপরাধ বাড়তে থাকলো, তখন আইন হলো। পর্যায়ক্রমে আইন কঠোর থেকে কঠোর হলো। কিন্তু শুধু আইন করে কী অপরাধ নির্মূল সম্ভব হয়েছে? হয়তো কমেছে, কিন্তু খুব বেশি লাভ হয়নি। এসব সামাজিক সমস্যা যদি সবাই মিলে প্রতিরোধ করি তাহলেই এ অপরাধ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।
বিদায়ী এ কমিশনার বলেন, প্রত্যেক মাদকসেবী টাকা জোগাড় করতে অপরাধে জড়ায়। এক সময় মাদক কারবারে জড়ায়। একজন মাদক কারবারিকে ধরলে শত শত কারবারি তৈরি হচ্ছে। আজ যে মাদক খায় তিনি ভবিষ্যতের কারবারি হবেন। সামাজিকভাবে সবাই মিলে যদি এটা প্রতিরোধ করতে না পারি তাহলে শুধু জেল দিয়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।
আমরা সমাজে বাস করি, আমরাই নির্ধারণ করবো আমাদের সমাজ কেমন হবে। সবাই হাত মেলালে সমাজের গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের দিনটির কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের বলেন, বঙ্গবন্ধু সেসময় প্রথম পুলিশ সপ্তাহ পালন করতে এসে কমিউনিটি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কমিউনিটি পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের মানুষ সেসময় থেকেই নিরাপদে থাকতে পেরেছে। আপনাদের কার্যক্রম, আপনাদের প্রচেষ্টা সেটিকে ঘিরেই পরিচালিত হোক।’
প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ এবং এ জনগণকে কেন্দ্র করেই কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম এগিয়ে যাবে এমনটাই আশা করেন তিনি।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যাপারটি ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যাপারটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে।
এছাড়া মূল ধারার পুলিশিংয়ের সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশের সেতুবন্ধ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ডিএমপির বিদায়ী কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম।