স্টাফ রিপোর্টারঃ
অসম্পূর্ণ অনেক কাজ, অনেক স্বপ্ন রেখেই চলে গেলেন বাংলার অন্যতম সেরা অভিনেত্রী ও সিনেমার মিষ্টি মেয়ে সারাহ বেগম কবরী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন কবরীর ছেলে শাকের চিশতী। তিনি বলেন, ‘খুসখুসে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেন সারাহ বেগম কবরী। ৫ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষার ফল হাতে পেলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে ৮ এপ্রিল দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কবরী। তখনকার স্মৃতি স্মরণ করে একবার কবরী বলেছিলেন, ‘সেখানকার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলাম। কীভাবে আমি মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ছেড়ে এক কাপড়ে পালিয়ে সেখানে পৌঁছেছি, সে কথা বলেছিলাম। সেখানে গিয়ে তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের দেশকে সাহায্যের আবেদন করি।’
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন কবরী। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’ পায় বেশ জনপ্রিয়তা।
২০১২ সালের এক ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বকোণ-গ্রামীন ফোনের যৌথ উদ্যোগে সারাহ বেগম কবরীকে চলচ্চিত্র এবং নাটকে অবদানের জন্য ‘চট্টগ্রামের অহংকার’ হিসেবে গুণী অভিনেত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়।