মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, রোববার, ৫ মে ২০২৪ ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গভীর সমুদ্রে শ্বাসরুদ্ধকর রাত কাটলো হাজারও পর্যটকের


প্রকাশের সময় :২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৪১ : পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ

প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজার আসার পথে গভীর সমুদ্রে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পড়ে রাত কাটিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি পর্যটক। এ ঘটনায় গভীর সমুদ্রে পর্যটকদের কান্নার রোল পড়ে যায়। প্রায় ১৫ ঘণ্টা গভীর সমুদ্রে তিনটি জাহাজ বদলের পর উপকূলে পৌঁছান তারা। সেন্টমার্টিন থেকে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ছেড়ে আসা পর্যটকবাহী জাহাজ এফভি বে-ওয়ান কক্সবাজারে পৌঁছেছে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায়। যাত্রীদের অভিযোগ, এফভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এবং এফভি বারো আউলিয়ার টিকিটের টাকা নিয়ে বে-ওয়ানে ওঠানোর কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসেন দিনাজপুর জেলার হাকিমপুরের মোহাম্মদ বিদ্যুৎ। তিনি জানান, সোমবার ভোরে এফভি বারো আউলিয়া জাহাজের টিকিট কেটে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যান তারা। একরাত অবকাশ যাপনের পর মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারগামী এফভি বে-ওয়ানে ওঠেন। সেদিন রাত ৮টার মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছার কথা থাকলেও তা আর সম্ভব হয়নি। কারণ, অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণে গভীর সমুদ্রে তিনবার জাহাজ বদল করে কর্তৃপক্ষ। এফভি বে-ওয়ান থেকে এফভি বারো আউলিয়ায়, এভাবে পুরো রাত গভীর সমুদ্রে কেটে যায়। পরের দিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজার জেটিঘাটে পৌঁছানো হয়।

একই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন দিনাজপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ লিটন। তিনি বলেন, ‘মাঝসমুদ্রে বে-ওয়ান জাহাজ থেকে বারো আউলিয়া জাহাজে পার করার সময় দুটি সিঁড়ি ব্যবহার করে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি সিঁড়ি ভেঙে গেলে আমার দুই সন্তান ভয়ে আঁতকে ওঠে। জাহাজ বদলের কারণে আমার স্ত্রী ও বড় সন্তান এক জাহাজে আর আমি ও আমার ছোট সন্তান অন্য জাহাজে ছিলাম। পুরো রাত পার হয়েছে ভয় ও আতঙ্কে। সকালে কক্সবাজার পৌঁছালে স্বস্তি ফিরে আসে।’

সালাহ উদ্দিন বকুল নামে এক পর্যটক বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে গিয়ে একটি বাজে অভিজ্ঞতা হলো। জাহাজ কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনা এর জন্য দায়ী। জাহাজে এক সিট তিন জনের কাছে বিক্রি করছে টাকার লোভে। আর যাত্রীরা যে সিট ভাড়া করে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার কথা, সেটি তো দূরের কথা দাঁড়িয়েও থাকাও মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ, পুরো জাহাজে মানুষ আর মানুষ। জাহাজের ভেতর মানুষের ঠাসাঠাসিতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।’

তার স্ত্রী মাহবুবা জ্যোতি বলেন, ‘রাতভর জাহাজে মানুষের অস্বাভাবিক ভিড়, চিৎকার, চেঁচামেচি ও কান্নায় এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে আমার দুই সন্তান শোয়াইব ও রায়ান ভয়ে আঁতকে ওঠে। এ সময় জাহাজ কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা দেয়, সাগর উত্তালের কারণে কূলে জাহাজ ভিড়তে সময় লাগবে। পুরো রাত পার করে দিলো তারা। জাহাজে খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন শত শত পর্যটক।’

এদিকে, প্রতি বছর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও চলতি পর্যটন মৌসুমে নাফ নদীতে নাব্য হ্রাসের কথা বলে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। তবে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের দিকে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে এফভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামের জাহাজটি চলাচলের অনুমতি পায়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে কক্সবাজার জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আবার একই দিন বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজার ফিরে আসে জাহাজটি। সেন্টমার্টিন ভ্রমণের আর কোনও বিকল্প নৌযান না থাকায় কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে হুমড়ি খেয়ে পড়েন পর্যটকরা। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন যাওয়া-আসার সময় একাধিকবার ইঞ্জিন বিকলসহ নানা কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় ওই জাহাজের পর্যটকদের। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে এ অবস্থা হচ্ছে বলে অভিযোগ পর্যটকদের।

যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব)-এর সাধারণ সম্পাদক ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে এফবি কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে কর্ণফুলী জাহাজটি মেরামতের জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। ফলে সেন্টমার্টিনে জাহাজের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু, ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কক্সবাজার (টুয়াক)-এর সদস্যরা চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের টিকিট চালু রাখে। টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দিতে বললেও তারা কথা শোনেনি। যার কারণে, চট্টগ্রামে থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ বে-ওয়ানের মাধ্যমে যাত্রীদের কক্সবাজারে আনা হয়েছে।’

টুয়াকের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস একমাস আগে থেকে টিকিট বিক্রি করেছে। সেখানে টুয়াকের কোনও হাত নেই। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের সব জাহাজ বন্ধ করে দিয়ে কক্সবাজার থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস একাই ব্যবসা করছে। তারা অনেক ক্ষমতাধর। স্থানীয় প্রশাসনের কথাও মানছে না কর্ণফুলী কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি আমরা পর্যটন সচিব স্যারকেও বলেছি। কিন্তু, কোনও কাজে আসেনি। জেটিঘাট থেকে এত রাতে পর্যটকরা কক্সবাজার শহরে আসছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য কোনও যানবাহনও দেওয়া হয়নি। এসব পর্যটকের দায়িত্ব কে নেবে, প্রশ্ন আমার।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে একটি জাহাজের অনুমতি আছে। রাতভর পর্যটকরা সমুদ্রে থাকার বিষয়টি জানা নেই। আর অতিরিক্ত যাত্রী নিলে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :