এম.এইচ মুরাদঃ
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হেনেছে। এখন সেটি স্থলভাগে উঠে আসতে শুরু করেছে। স্থলভাগে উঠে আসার প্রক্রিয়ার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি। সেই সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাজুড়ে চলছে তুমুল বৃষ্টি।
স্থলভাবে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে কমতে শুরু করবে ঝড়ের শক্তি। তবে এগোনোর গতি থামবে না।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটার দিকে এ ঝড় পশ্চিমবঙ্গের দীঘার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে। বিশাল বাসের এ ঝড় পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আম্ফান আঘাত হানার সময় বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে।
সেই সময় এর অবস্থান ছিল ভারতের সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫ কিলোমিটার, দীঘা থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান-এর প্রভাবে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে ভারি বৃষ্টি।
যেসব এলাকা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে সেগুলোকে ‘রেড প্লাস জোন’ ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার পুরো রাত কন্ট্রোল রুমে অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুর্যোগ কেটে যাওয়ার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে বাইরে বের না হতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় আম্পান ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে, পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে, সাগরদ্বীপ থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২৬০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, এ ঝড় রাত ৮টার মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন সাগরদ্বীপের পূর্ব পাশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলে পৌঁছাতে পারে।
আজ বুধবার (২০ মে) বিকাল ৩টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ব্যস প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগতে পারে। এর প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হতে পারে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ জন মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এছাড়া ৫ লাখ ১৭ হাজার ৪৩২টি গবাদিপশুকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে বলে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন।
লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ১২ হাজার ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার ৩৩৬টি করা হয়েছে। বাংলাদেশে ঝড়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া মানুষের সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন ত্রণ প্রতিমন্ত্রী।
এর আগে গত বছর ঘূর্ণিঝড় ফণির সময় ১৮ লাখ এবং বুলবুলের সময় ২২ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলে আঘাত হানার আগেই ভোলার চরফ্যাশনে ঝড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, ছিদ্দিক ফকির নামের ৭০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ বয়স্ক ভাতা আনার জন্য ভাড়া করা মোটরসাইকেলে উপজেলা সদরে যাচ্ছিলেন। ঝড়ো বাতাসে একটি গাছ ভেঙে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান-এর কারণে চট্টগ্রামে মহাবিপদ সংকেত জারি হওয়ার পর বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্দরে জারি করা হয়েছে ‘চার মাত্রার সতর্কতা’।
জেটি থেকে সব জাহাজ নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। বর্হিনোঙ্গরে অবস্থানরত সব বড় জাহাজকে গভীর সমুদ্রে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সব লাইটারেজ জাহাজ শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে নোঙ্গর করে রাখতে বলা হয়েছে, বন্দর চ্যানেল ক্লিয়ার রাখা হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকার আকাশ আংশিক মেঘলা, থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে বইছে হালকা বাতাস।
গত ১৬ মে প্রথম প্রহরে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর ছয় ঘণ্টার মধ্যে তা শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। আরও ঘণীভূত হয়ে সেই রাতেই তা পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের নির্ধারিত তালিকা থেকে এ ঝড়ের নাম দেওয়া হয় ‘আম্ফান’। এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম।