রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হওয়ার কথা ছিল বুধবার (২০ মে)। কিন্তু আবহাওয়া খারাপের কারণে রোদ ঝলমলে দিনের অপেক্ষায় ছিলেন রাজাশাহীর চাষিরা। কিন্তু সে অপেক্ষাই যেন কাল হলো। আম্পানের মূল ঝাপ্টাটাই গেছে আমের ওপর দিয়ে। এতে অনেক চাষিই এখন নিঃস্ব। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় ঝরে পড়া আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সা কেজি দরে। তারপরও ক্রেতা পাচ্ছেন না আম চাষিরা।
এদিকে, চাষিদের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আম কিনে ত্রাণ হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘ঝরে পড়া আম ব্যবসায়ীরা কেনার পরও যদি অবিক্রিত থেকে যায় তা জেলা প্রশাসন কিনে করোনা ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হবে। আমরা আম কেনা শুরু করে দিয়েছি। এতে করে চাষিদের কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। এর আগে কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হয়েছিল।’
রাজশাহী নগরীতে ১০-২০ টাকায় ঝরে পড়া আম বিক্রি হয়েছে। নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ বলেন, বাঘা ও চারঘাট থেকে ভ্যানে করে আম শহরে নিয়ে আসায় খরচ পড়ে যায় বেশি। এজন্য নগরীতে আমের দাম বেশি।
বাঘা উপজেলার আড়ানী গোচর গ্রামের কড়ালি ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বরাবর ঝরে পড়া আম কিনে ঢাকায় চালান করি। এবার এই আম ৫০ পয়সা কেজি দরে কিনছি।’
একই গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়ে আমার আম বাগানের অর্ধেক আম পড়ে গেছে। এই আম বিক্রি করার জায়গা নেই। কেউ কিনতে চাচ্ছে না। তাই বাড়িতে রেখে দিয়েছি।’
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর বাগানে আম কম থকায় উৎপাদন ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন ধরা হয়েছে ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে ঝড়ে পড়ে গেছে ১৮ হাজার মেট্রিক টন।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, ‘এই উপজেলায় খাদ্য শস্যের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল আম। ঝরে পড়া আম আমি নিজে চাষিদের কাছে থেকে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ১০০ টাকা দরে কিনেছি।’
চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের আমচাষি বীর বাহাদুর জানান, ঝড়ে আম, ভুট্টুা ও তিলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। যে আম বিক্রি হতো ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে। সেই আম ঝড়ে পড়ে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ পয়সা কেজি দরে। আম কেনার লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতে মহামারি করোনায় আম নিয়ে রয়েছে শঙ্কায়। তার ওপর এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবার জীবনে বয়ে এনেছে কষ্ট। আম বাগানে যেতেই মন ভেঙে গেছে। এভাবে কখনও ঝড়ে এমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনজুর রহমান বলেন, আমের বেশ অনেক ক্ষতি হয়েছে। যা পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে। তবে দুটি উপজেলায় গড়ে ১০ শতাংশ আমের ক্ষতি হয়েছে। যা আর্থিখ ক্ষতির পরিমাণ ২৫-৩০ কোটি টাকা।
পবা উপজেলার বুধপাড়া এলাকার নাসিম জানান, ১০ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে তার। গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাতসহ বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে বাগানে। গাছে প্রচুর আমও ধরেছিল। আর কয়েকদিন পরই আম পাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ঝড়ে ৮০ শতাংশই আম ঝরে পড়েছে।
আরেক আমচাষি মনির বলেন, ‘এবার আমের বাম্পার ফলনের সম্ভবানা ছিল। কিন্তু এক রাতের ঝড়ই আমাদের নিঃস্ব করে দিলো। সরকারের কাছে দাবি, দরিদ্র আম চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানিয়েছেন, ঝরে পড়া আম বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব আম দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে ত্রাণ হিসেবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল আলম বলেন, আম্পানের আঘাতে জেলায় কৃষি ফসলের মধ্যে আমেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহীতে এবার ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আমের গাছ রয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিকটন। তবে আম্পানের কারণে তা অর্জিত নাও হতে পারে।