স্টাফ রিপোর্টার:
রফতানিমুখী চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল। টু লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীত করার সময় এ মহাসড়কে প্রতি বছর যান চলাচল বাড়ার হার নিয়ে যে সমীক্ষা করা হয়েছিলো, তা অতিক্রম করেছে অনেক আগেই।
২০১৬ সালে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি বা জাইকার সমীক্ষায় ২০২৬ সালে এ মহাসড়কে দৈনিক ২২ হাজার যান চলাচল করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) জরিপে বলা হয়েছিল, ২০২২ সালে প্রতিদিন ২৬ হাজার যান চলাচলের কথা।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের এ সংক্রান্ত সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দৈনিক যান চলাচলের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩০ হাজার।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ ময়নুল হাসান বলেন, এ মহাসড়কে যান চলাচলের সংখ্যা নিরূপণে তিন চার বছর পরপর স্টাডি করা হয়। এছাড়া টোলঘর থেকেও প্রাপ্ত তথ্য কাজে লাগানো হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করছে এ মহাসড়কে। তবে আগামী তিন চার মাসের মধ্যেই নতুন জরিপ করা হবে।
স্থানভেদে ছয় ও আট লেন, থাকছে উড়াল পথ ও টানেল:
২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের মধ্যে মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। স্থানভেদে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেনে উন্নীত করা হবে এ মহাসড়ক। বিদ্যমান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কথা বিবেচনা করে নতুন জমি অধিগ্রহণ যতটা সম্ভব কম করে পূর্বের অধিগ্রহণ করা জমির ওপরই মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার ওপর জোর দিচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এজন্য আধুনিক ডিজাইনের নকশা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশের ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে কীভাবে এ ছয় লেন কিংবা আট লেন বাস্তবায়ন হবে, সে ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ ময়নুল হাসান বলেন, ‘এখন ডিজাইনিং কনসেপ্টে অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও ওভারপাস হবে। আবার কোথাও টানেল, কোথাও ইন্টারচেঞ্জ হবে। কোনো কোনো জায়গায় জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। তবে আমরা আগের অধিগ্রহণ করা জায়গার মধ্যেই এটা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।’
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতোই হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক:
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী সময় সংবাদকে জানান, আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হবে। এরই মধ্যে এই প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতা সংস্থা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হলে জুনের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি তৈরির পর আগামী বছরের শেষ নাগাদ এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমে এই মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেয়া হলেও পরবর্তীতে যেন ৮ লেনে উন্নীত করা যায় সে ব্যাপারেও ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা হবে। পদ্মা সেতুকে সংযুক্তকারী ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মতোই হবে এই নতুন মহাসড়ক।
ভবিষ্যতে মহাসড়ক প্রশস্ত করার সুযোগ রেখে সমীক্ষা:
এরই মধ্যে মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ি চলতে শুরু করেছে। মাতারবাড়ি বন্দর ও মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোপুরি চালু হলে যান চলাচল আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়টি সমীক্ষা ও নকশায় স্থান পেয়েছে উল্লেখ করে এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বর্তমান মহাসড়কের কিছু স্থান যেমন – বাসস্ট্যান্ড, গ্রোথ সেন্টার ছাড়া কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানেই যান চলাচল সক্ষমতা বিরাজ করছে। তবে যে স্থানগুলোতে ক্যাপাসিটি আরও বাড়াতে হবে সেই স্থানগুলোর কথা মাথায় রেখেই ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে।