রাজশাহী প্রতিনিধি:
অবৈধ উপায়ে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রী নিশাদ তামান্নাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিকালে তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ১ ও ২ জুন কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিলেন দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।
দুদকের আইনজীবী বজলে তৌহিদ আল হাসান বাবলা বলেন, ‘সহকারী প্রকৌশলী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক দুর্নীতির মামলা চলমান। নিজ নিজ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়া পর্যন্ত জামিনে ছিলেন। ইতোমধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুদক। রবিবার দুপুরে মামলা দুটির শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠলে ২০১৭ সালে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তখন কামরুজ্জামানকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একাধিকবার দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫ লাখ ১৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেন। এ ছাড়া অসংগতিপূর্ণভাবে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন দেওয়া হয়। মামলার তদন্তে তার ১ কোটি ৬ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য পায় দুদক। এদিকে কামরুজ্জামানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার সময় ৫৩ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায়। তবে তদন্তে ৬০ লাখ ৬২ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
২০২২ সালের ১ জুন কামরুজ্জামান ও ২ জুন তার স্ত্রী নিশাদ তামান্নার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। পরে ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন তারা। এরই মধ্যে মামলার তদন্ত চলাকালে তাদের আরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। অভিযোগপত্রে নিশাদ তামান্নার বিরুদ্ধে ৬০ লাখ ৬২ হাজার ১১৮ টাকা অবৈধভাবে অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমে আদালতে তাদের বিচার শুরু হলো।
রবিবার কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রী জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। জামিন শুনানিকালে দুদকের বিশেষ প্রসিকিউটর শহিদুল হক খোকন আসামিদের জামিন বাতিলের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী আবু বাকার ও মিজানউদ্দিনসহ আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে মতামত দিয়ে শুনানিতে অংশ নেন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেখ কামরুজ্জামানের বাড়ি কুষ্টিয়ার বারখাদা গ্রামে। নিশাত তামান্না রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার পবা নতুনপাড়া মহল্লার নূরুল ইসলামের মেয়ে।