স্টাফ রিপোর্টারঃ
আবদুল জব্বারের বলিখেলার সর্বশেষ আসরে সমান তালে টেক্কা দিয়েও শাহ জালাল বলির কৌশলের কাছে হেরে যান তারেকুল ইসলাম জীবন বলি। ভাগে পেয়েও তিনি ছুঁতে পারেনি চ্যাম্পিয়ন ট্রপি। ট্রফিতে চুমু দিতে না পারার আক্ষেপ পোড়াতে থাকে জীবনকে।
এদিকে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর খেলা বন্ধ থাকার কারণে অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও এটাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নেন জীবন বলি। ভুল শোধরাতে করতে থাকেন কঠোর পরিশ্রম। নিজেকে তৈরি করেন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। দুই বছর পর অবশেষে সোমবার লালদীঘির বলির মঞ্চে বিজয় কেতন উড়িয়েছেন জীবন। সেই শাহ জালাল বলিকে হারিয়ে হয়েছেন নতুন চ্যাম্পিয়ন। নিয়েছেন মধুর প্রতিশোধ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জীবন উল্লাস করতে করতে ঝেড়ে ফেলেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার আক্ষেপ।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনুভূতি প্রকাশ করে জীবন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল জব্বারের বলি খেলার চ্যাম্পিয়ন হবো। গতবার চ্যাম্পিয়ন হতে না পেরে শপথ নিয়েছিলাম পরের বার জেতার। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে। অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে ভীষণ খুশি হয়েছি। ’
চ্যালিঞ্জিং রাউন্ড, নক আউট পর্ব, সেমিফাইনাল শেষে ফাইনালে উঠেন গতবারের দুই ফাইনালিস্ট জীবন বলি এবং শাহ জালাল বলি। ৪ টা ২০ মিনিটে শুরু হয় জব্বারের বলি খেলার চূড়ান্ত খেলা।
২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্তের বলির মঞ্চে একের পর এক কসরত করতে থাকেন হেভিওয়েট এ দুই বলি। দুই বলিয়ান শক্তি এবং বুদ্ধি দিয়ে মোকাবেলা করতে থাকেন একে অপরের আঘাত। প্রায় ৩০ মিনিটের খেলায় একে অপরকে ঘায়েল করতে না পারলেও কৌশল এবং দক্ষতার নৈপূণ্যের কারণে রেফারি আবদুল মালেক জীবনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। এর আগে জব্বারের বলি খেলায় ৭২ জন বলি অংশ গ্রহণ করলেও নক আউট পর্বে লড়েছেন ৪০ জন বলি। প্রথম পর্ব চ্যালিঞ্জিং রাউন্ড, নক আউট পর্ব, সেমিফাইনাল পর্বে অংশগ্রহণ করেন।
জব্বারের বলি খেলাকে ঘিরে লালদীঘি এলাকার কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে বৈশাখী মেলা। যাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন হাজারো বিক্রেতা। এ মেলা থেকেই সাংসারিক নিত্য ব্যবহার্য ও গৃহস্থালী কিনতে ভীড় করেছেন ক্রেতার। তারা মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে কিনছেন হাতপাখা, শীতল পাটি, ঝাড়ু, মাটির কলস, মাটির ব্যাংক, রঙিন চুড়ি, ফিতা, হাতর কাঁকন, বাচ্চাদের খেলনা, ঢাক-ঢোল, মাটি ও কাঠের পুতুল, বাঁশি, তৈজসপত্র, আসন, চৌকি, খাট, আলমারি, ফুলদানি, তালপাখা, টব, হাড়ি-পাতিল, দা-ছুরি, কুলা-চালুনসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র।
১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুবক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলিখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে বলিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলি’।