মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হুইপপুত্র শারুনকে নিয়ে চটকদার শিরোনাম! মনগড়া ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কুচক্রীমহল


প্রকাশের সময় :১৮ এপ্রিল, ২০২১ ৭:১৪ : পূর্বাহ্ণ

মাসুদ ফরহান অভি:

দেশের দুই শীর্ষ পত্রিকায় হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে নিয়ে যে নিউজটি প্রকাশ করেছে তার বেশকিছু তথ্য অদ্ভুতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ। একজন প্রতিবেদক কিছুতেই কোনো ঘটনার বিচার করে রায় দিয়ে দিতে পারেন না। মুলধারার গণমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ঐ প্রত্রিকার সংবাদের এই শিরোনামটি আমাকে কষ্ট দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিদ্যার একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে চাঞ্চল্যকর বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ আমার বিশ্লেষণের আগ্রহ-বস্তু।

অবাক করা বিষয় হল, হুবহু একই শিরোনামে দেশের স্বনামধন্য দুই পত্রিকায় ‘লাইন বাই লাইন’ তুলে দেওয়া হয়েছে। আরও অবাক করা বিষয় হল, দুটি সংবাদের ক্রেডিট লাইন ভিন্ন। দুই পত্রিকার একটিতে প্রতিবেদক যিনি তিনি ওই পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি। সেখানে তার নাম দেওয়া আছে। আরেকটির ক্রেডিট লাইনে আছে নিজস্ব প্রতিবেদক। অথচ দুটো সংবাদ ছাপা হয়েছে হুবহু। এক পত্রিকার বিশেষ সংবাদ আরেক পত্রিকা হাউজে একসঙ্গে গেলই বা কি করে? এমন সাংবাদিকতা বিশ্ব বিরল!

কিভাবে দুই ভিন্ন সাংবাদিক মিলে একই সংবাদ হুবহু দুটি পত্রিকায় লিখতে পারেন, বা সাংবাদিকতা বিদ্যায় এরকম কোনো নীতি আছে কিনা তা আমার জানা নেই। এই সংবাদটিতে শতভাগ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের তা এই একটি আচরণেই প্রমাণিত। সংবাদ মাধ্যমের যে নূন্যতম নৈতিকতা চর্চার আয়োজন, সে আয়োজনকেই শারুন চৌধুরীকে নিয়ে হওয়া এই দুই পত্রিকা ভন্ডুল করে দিয়েছে।

তবে একটি প্রত্রিকা শারুনের বক্তব্য ছাপানোর প্রয়োজন মনে করলেও অন্য প্রত্রিকাটি তা মনে করেনি।

নিউজ দুটির ইন্ট্রোর অর্থাৎ প্রথম বাক্যও হল, ‘হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসায় বলি হলেন তরুণ ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী।’

(হুইপপুত্র বলতে পটিয়ার সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটির সদস্য নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনকে বুঝানো হয়েছে)

কিন্তু গোটা সংবাদের কোথাও এই তথ্যের স্বপক্ষে বিন্দুমাত্র কোনো ভিত্তি নেই। কোনো নথি বা এ সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগে এই ধরণের কোনো তথ্য উল্লেখ আছে বলে নিউজে উল্লেখ নেই। কিংবা এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায়ও অভিযোগকারী বলেননি, ‘আত্মহত্যা যিনি করেছেন তিনি আসলে আত্মহত্যা করেননি। তাকে হুইপপুত্র তার গোপন ব্যবসার মাধ্যমে বলি দিয়েছে।’ সাধারণত আমরা কেউ কাউকে ‘বলি’ দেওয়া বলতে বুঝাই কেউ কাউকে হত্যা করেছে।

মোরশেদ নামে যে ব্যাংকার আত্মহত্যা করেছেন তার স্ত্রী ইশরাত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও এই শিরোনাম বা নিউজের প্রথম বাক্যে উল্লিখিত তথ্যের লেশ মাত্র নেই।

এই সংবাদের ভেতরে কোথাও এই ‘বলি’ দেওয়ার তথ্য সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। অভিযোগকারীর মুল অভিযোগ যাদের নিয়ে তাদের নাম-পরিচয় শিরোনামে ও নিউজের প্রথম বাক্যে আড়াল করে গৌণ ব্যক্তিকেই মুখ্য ‘সাজিয়ে’ এই সংবাদ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। যার কারণে নিউজটি শুরুতেই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।

নিউজে উল্লেখ করা হয়েছে, অস্ত্র উঁচিয়ে ফেসবুকে মহড়ার ছবি প্রকাশ করেছেন, কখনো গোপন আস্তানায় আকণ্ঠ পানীয়ে ডুবে থেকেন হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন।

অথচ কয়েক বছর আগে শারুনের বিরুদ্ধে যখন একটি দৈনিক প্রত্রিকা এ ধরণের সংবাদ প্রকাশ করেছিল তখন আমি চট্টগ্রামে সাংবাদিকতা করি। জানার আগ্রহ হল আসলেই শারুনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি কতটা সত্য বা গ্রহণযোগ্য!

খোঁজ নিয়ে জানলাম, দেশের বাইরে শারুন রেন্ট শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। যেমনভাবে কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে সাউথইস্ট ব্যাংকের স্পন্সরে শুটিং প্রতিযোগিতা হয়, যেখানে অংশ নেন চট্টগ্রামের সাংবাদিকরাও! সাংবাদিকের হাতে এই প্রেক্ষাপটে যদি অস্ত্র উঠে আর তার ছবি যদি কেউ ফেসবুকে দেয় সেটাকে নিশ্চয় কোন ভালো মানের দৈনিক প্রত্রিকা এভাবে শিরোনাম করবে না। বাংলাদেশের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন মেলার আসরে ১ টাকায় এয়ারগান দিয়ে ৪টা বেলুন ফুটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। বেলুনের দিকে ক্যামেরা তাক না করে অস্ত্র হাতে কোনো ব্যক্তিকে যদি ফেসবুকে হাজির করা হয় তাহলেও কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিদিন নিউজ করে দিবে না। শিরোনাম করবে না নিশ্চয়, ‘অস্ত্র উঁচিয়ে ফেসবুকে মহড়া দিচ্ছেন অমুক’!

আবার বিদেশী ব্র্যান্ডের পানির বোতলকে মদের বোতল সাজিয়ে সংবাদ উপস্থাপনের অভিযোগও আছে ঐ প্রত্রিকার বিরুদ্ধে। শারুনই ঐ প্রত্রিকার বিরুদ্ধে তখন এমন অভিযোগ তুলেছেন। শারুনের প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই যে এসব সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে তা কিন্তু প্রতীয়মান হচ্ছে।

এবার আসি নিউজের মুল বিষয়ে। সংবাদটিতে দেখলাম ‘ঘটনার পরম্পরা’ নামে একটি সাব-হেড রয়েছে। এতে আত্মহননকারী ব্যাংকারের স্ত্রীর ইশরাতের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ২৯ মে চিটাগং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে দুটি গাড়িতে করে ১০-১২ জন যুবক ব্যাংকার মোরশেদের বাসায় আসে। পারভেজ ইকবাল দলের অন্যদের নিয়ে লিফট বেয়ে উপরে উঠে বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকেন। এ সময় দরজা খুলতে না চাইলে লাথি মারতে থাকেন। নিজের ও শিশুকন্যার নিরাপত্তার জন্য দরজা খুলতে না চাইলেও দরজার অন্যপ্রান্ত থেকে হুমকি দিয়ে পারভেজ ইকবাল দরজা খুলতে চাপ দিতে থাকেন। উত্তেজিত পারভেজ ব্যাংকারের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, ‘আমরা আপনাকে আটকে রেখে ওকে (মোরশেদ) আনব।’ এ সময় ভবনটির নিচে নেমপ্লেটবিহীন গাড়িতে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু বসা ছিলেন বলেও জানান তিনি (মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত)। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ব্যাংকার মোরশেদ তার স্ত্রী সন্তানসহ পালিয়ে নিকটাত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। সহযোগিতা চান পুলিশের কাছে। থানায় জিডিও করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা পাননি মোরশেদ। পরিবারটি এখনো চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।’

মোরশেদের স্ত্রীর এখানে উল্লেখ করেছেন, ‘পারভেজ ইকবাল দলের অন্যদের নিয়ে লিফট বেয়ে উপরে উঠে বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকেন।’

এখানে জানা উচিত ওই ভবনের কত তলায় মোরশেদের বাসা। যেহেতু লিফট বেয়েই ওই বাসায় যেতে হয় সেহেতু নিচ তলায় যে মোরশেদের বাসা নয় তা নিশ্চিত। কিন্তু তাহলে কীভাবে আত্মহত্যাকারী মোরশেদের স্ত্রী বাসা থেকে দেখলেন নিচে টেমপ্লেটবিহীন গাড়িতে শারুন চৌধুরী ও আরশেদুল আলম বাচ্চু বসা ছিলেন?

ইশরাত বলেছেন, পারভেজ ইকবাল দরজায় লাথি দিয়েছেন কিন্তু তারা দরজা খুলেননি। আবার বলছেন তারা আত্মীয়ের বাসায় আশ্র‍য় নিয়েছেন দরজা না খুলেই! মনে করলাম, তারা ফিরে যাওয়ার পর মোরশেদ তার পরিবারকে নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন। জিডিও করেছেন এই ঘটনায়! ওই জিডিতে কি শারুন চৌধুরী ও আরশেদুল আলম বাচ্চুকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল? দুই বছর আগের এই ঘটনায় যদি শারুন ও আরশেদুল আলম বাচ্চুকে ইশরাত দেখেই থাকেন তাহলে জিডিতে কেন শারুন ও বাচ্চুর নাম তিনি উল্লেখ করেননি?

আবার সংবাদে ইশরাত বলেছেন, ‘২০১৯ সালে তাদের বাসায় হামলার ঘটনায় শারুন ও বাচ্চু অংশ নেয়। মোরশেদের সঙ্গে তাদের টাকা লেনদেন নেই।’

এখন প্রশ্ন হল, ইশরাতের কথায় হামলায় অংশ নিল শারুন ও বাচ্চু। তখনও তাদের দায়েরকৃত জিডিতে এ দুই জনের নাম দিলেন না? আবার তার স্বামী আত্মহত্যা করলো। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় যাদের সঙ্গে লেনদেন তাদের নাম দিকেন ঠিকই কিন্তু বাচ্চু ও শারুনের নাম দিলেন না কেন?

ইশরাতের উত্তর অনেকেই মনে মনে দিতে পারেন, ‘শারুন ও বাচ্চু প্রভাবশালী বলেই তাদের নাম জিডি ও মামলায় দেননি তারা।’ কিন্তু মামলায় আসামী না করে ‘ভয়ংকর’ শারুন ও বাচ্চুর নামে ইশরাত সংবাদ সম্মেলনতো করে দিলেন। মামলা কিংবা জিডিতে নাম দিতে ভয় পেলেও সংবাদ সম্মেলনে শারুন-বাচ্চুর নাম নিতে ইশরাতের ভয় না করাটা অত্যন্ত রহস্যজনক! সঙ্গত কারণে অনেকের ধারণা, কারও প্ররোচনায় বাচ্চু, সিএমপির উপ কমিশনার বিজয় বসাকের নাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন আত্মহননকারী মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত। যদিও শারুনের নাম ইশরাত তার সংবাদ সম্মেলনে আনেননি।

আবার শারুন কিংবা আরশেদুল আলম বাচ্চুর বিরুদ্ধের আত্মহননকারী ব্যাংকার মোরশেদ তাত লিখে যাওয়া সুইসাইড নোটেও কিছু লিখেননি। যদি তাদের প্রতি তার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ বা কোনো অভিযোগ থাকতো তিনি তা লিখে যেতেন। মোরশেদ যেদিন আত্মহনন করলেন সেদিনও কিন্তু অগণিত গণমাধ্যম মোরশেদের পরিবারের বক্তব্য নিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তার পরিবারের সদস্যদের কেউ শারুন ও আরশেদুল আলম বাচ্চুকে নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। আইনানুগ ব্যবস্থায় তাদের কোনো অবস্থান নেয়। ঘটনার কয়েকদিন পর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিপক্ষের কারও এজেন্ডা ইশরাত বাস্তবায়ন করেছেন কি-না সে বিষয়েও হওয়া উচিত তদন্ত।

আসলে, চাঞ্চল্যকর এই আত্মহত্যার নেপথ্যে মোরশেদের পারিবারিক কলহ ছিল কি-না সেটিও তদন্তে উঠে আসা উচিত। সন্দেহের দৃষ্টি রেখে সুক্ষ্মভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত পরিবারের সদস্যদেরও। কারণ পুরো বিষয়টি নিয়ে শারুন চৌধুরী ও আরশেদুল আলম বাচ্চুর মত চট্টগ্রামে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মর্যাদা জড়িত। এটি নিয়ে খেলছে তাদের রাজনৈতিক শত্রু ও বুক-পেটহীন কিছু প্রেসক্রাইভড সাংবাদিক। যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো বিভিন্ন অংকের কাগজগুলোর খিদায় কাতর থাকে!

শেষ করবো নবী করিম (সা.) আত্মহত্যার শাস্তির বিষয়ে তিরমিজি ও নাসায়ী শরীফের একটি সহীহ হাদিস দিয়ে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যেই জিনিস দ্বারা আত্মহত্যা করে, কেয়ামতের দিন তাকে সেই জিনিস দ্বারাই শাস্তি দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে, সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে, সে দোজখেও সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।’

ট্যাগ :