নিউজ ডেস্কঃ
এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাইশ (কার্প) জাতীয় মা মাছের প্রায় ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। যা ১০-১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আহরণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাত ১২টার দিকে জোয়ারের সময় মা-মাছের কিছু নিষিক্ত ডিম বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞ মৎস্যজীবীরা পেলেও শুক্রবার (২২ মে) সকাল থেকে পুরোদমে ডিম ছাড়ে বড় বড় মা-মাছগুলো।
স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ শুক্রবার (২২ মে) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নদীতে ডিম ছাড়তে থাকে মা মাছ। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্তও নদীর বিভিন্নস্থানে ডিম পাওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নমুনা ডিম দেয় মাছ। রাতে ঝড়ো বৃষ্টি ও জোয়ার সৃষ্টি হওয়ার পর শুক্রবার সকালে ব্যাপকভাবে ডিম ছাড়তে মা মাছ। এরপর ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে উঠেন নদীর দুই পাড়ের (রাউজান-হাটহাজারী)’র কয়েকশ মৎস্যজীবি। তারা বৃহস্পতিবার থেকে ডিম সংগ্রহের প্রত্যাশায় নদীতে ডিম ধরার নৌকা, বালতি, জাল নিয়ে নদীতেই অবস্থান নিয়েছিল। অবশেষে যেন তাদের মুখে হাসি ফুটে শুক্রবার সকালে। তবে বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহের পরও অনেক ডিম সংগ্রহকারীর মুখে হাসি নেই লকডাউনের কারণে। ডিম থেকে ফুটানো রেণুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তা এবার ক্রেতা সংকটে আশঙ্কা করছেন সংগ্রহকারীরা। ফলে দাম হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দুপুর আড়াইটার দিকে বলেন, চবি হালদা রিসার্চ ল্যাব, মৎস্য অধিদফতর ও উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফের তিনটি টিম এবার মা-মাছের ডিম সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছে। আমাদের সম্মিলিত হিসাবে ২৮০টি নৌকায় ৬১৫ জন ডিম সংগ্রহকারী এবার মাছের ডিম সংগ্রহ করেছেন। সব মিলে তারা এবার ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। যা গত ১০-১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে হালদা থেকে ৭ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। সচরাচর ৪০-৬০ কেজি ডিম থেকে এক কেজি রেণু হয়। এটি নির্ভর করে ডিম সংগ্রহকারীদের তৎপরতা, আবহাওয়া, লবণাক্ততার পরিমাণ, তাপমাত্রা, অভিজ্ঞতা, পরিচর্যা ও পরিবেশের ওপর। চার দিন পর রেণু উৎপাদনের বিষয়ে আমরা স্পষ্ট ধারণা পাবো।
রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর বলেন ‘সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর তিনটার পর পর্যন্ত কমপক্ষে রাউজান-হাটহাজারীর ৬শ ১৫জন ডিম সংগ্রহকারী নদী থেকে মা মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। একেকজন ডিম সংগ্রহকারী কয়েক কেজি করে ডিম পেয়েছে।’ তিনি জানান, এবার নদীতে ডিম পাওয়ার পরিমাণ গতবছরের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবার হালদার কাগতিয়ার আজিমের ঘাট, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বিনাজুরী, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, সত্তারঘাট, দক্ষিণ গহিরা, মোবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিচর এবং হাটহাজারী গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহির ঘাট, আমতুয়া, মার্দাশা ইত্যাদি এলাকায় ডিম পাওয়া গেছে বেশি।