এম.এইচ মুরাদঃ
এবার ষড়ষন্ত্রের শিকার হয়েছেন চসিক ২৮নং দক্ষিন পাঠানটুলি ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাদের। মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি একাত্তর বাংলা নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের সাথে রাজনীতি করি, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এটাই আমার অপরাধ। আর সেটি মেনে নিতে না পেরে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
আমার বিরুদ্ধে বিনাকারণে জিডি, সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ-বললেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৮ নং দক্ষিণ পাঠানটুলি ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাদের।
এর আগে শুক্রবার (৮ মে) বিকেলে স্থানীয় সাংসদ এম এ লতিফকে গালাগাল এবং তার পক্ষে ত্রাণ বিতরণের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ডবলমুরিং থানায় কাউন্সিলর আবদুল কাদেরসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিডি করেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোস্তফা কামাল টিপু।
কাউন্সিলর আবদুল কাদের একাত্তর বাংলা নিউজকে বলেন, শুক্রবার মোগলটুলি জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে আমি আমার বাবার কবর জেয়ারত করছিলাম। তখন দেখতে পাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে বরং লোকজন জড়ো করে এমপি লতিফ সাহেবের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করছেন মোস্তফা কামাল টিপু।
এসময় মুসল্লিদের বক্তব্য ছিল, এমপি ত্রাণ দিচ্ছেন ভালো কথা, কিন্তু করোনা প্রতিরোধে সরকারি নিয়ম ও নির্দেশনা তো মানতে হবে। এনিয়ে টিপুর সাথে মুসল্লিদের বাকবিতণ্ডা ও কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনা শুধু এটুকুই। এরপর আমরা যে যার মতো করে চলে যাই। নারীশক্তির সদস্যরা সহ তারা বোধহয় আরও কিছুক্ষণ ত্রাণ তদারকি করেছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় শুনতে পাই এ ঘটনায় আমাকেসহ জড়িয়ে ডবলমুরিং থানায় জিডি করেছেন টিপু। অথচ এই ঘটনার সময় আমি এবং আমার বিরুদ্ধে যিনি জিডি করেছেন অর্থাৎ মোস্তফা কামাল টিপুও ছিলেন না ঐ স্হানে। কিন্তু কিভাবে এই রকম একটি মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে জিডি পর্যন্ত করা হলো তা আমার বোধগম্য নয়।
কাউন্সিলর কাদের বলেন, নির্লজ্জ্ব মিথ্যাচারের সীমা আছে। হুমকি দূরের কথা, ত্রাণবিতরণকারী কারো সাথেই আমার কোনো কথা হয়নি। অথচ বলা হলো, আমি প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছি, এমপি সাহেবকে গালাগাল করেছি। ডবলমুরিং থানা পুলিশের এসআই অর্ণবকে জিজ্ঞেস করুন। তিনি ঘটনাস্থলে এসেছেন, প্রত্যক্ষদর্শী সবার কথা বলেছেন। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা তিনি পেয়েছেন কিনা দয়া করে তাকে জিজ্ঞেস করুন।
সম্পৃক্ততা যদি না-ই থাকে শুধু শুধু আপনার বিরুদ্ধে কেন জিডি হবে- এমন প্রশ্নে কাউন্সিলর আবদুল কাদের বলেন, আমি তৃণমূল থেকে ছাত্রলীগ করে এই পর্য়ায়ে এসেছি। ১৯৮৭-৮৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজকে জীবনবাজি রেখে শিবিরমুক্ত করেছি।আমি রাজনীতির মানুষ। তাই প্রকৃত রাজনীতিবিদ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মেয়র আ.জ.ম নাছির ভাইয়ের সাথেই আছি, রাজনীতি করছি। অন্যদিকে মেয়র আ.জ.ম নাছির ভাইয়ের সাথে এমপি লতিফ সাহেবের বিরোধ। নাছির ভাইয়ের সাথে থাকাটাই মনে হচ্ছে আমার অপরাধ। এজন্য এমপি সাহেব ও অন্যরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন।
কাউন্সিলর কাদের বলেন, আমি আপাদমস্তক আওয়ামীকর্মী হওয়া সত্ত্বেও সেই ষড়ন্ত্রের অংশ হিসেবে স্থগিত হওয়া সিটি নির্বাচনে আমাকে কাউন্সিলর পদে দল থেকে মনোনয়ন-বঞ্চিত করা হয়েছে। এরপরও ধৈর্য়্য ধরে বিপদে-আপদে, করোনাসঙ্কটে মানুষের পাশে থেকে ইতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে নিজের অবস্থান সুসংহত রেখেছি। আর সেটিই অনেকে সহ্য করতে পারছেন না। তাদের ধারণা, জননেতা আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে আমি সুন্দরভাবে সবকিছু ওভারকাম করছি। তাই আমাকে টেনে ধরতে হবে। সেদিনের মিথ্যা জিডি তারই অংশবিশেষ। কিন্তু আমি মনে করি মহান আল্লাহর দয়া এবং এলাকার আপামর জনগণ আমার পাশে থাকলে ইনশাআল্লাহ ষড়যন্ত্রকারীরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
করোনা সংকটে তার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরো দেশ আজ করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ স্তব্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েক যুগে প্রিয় মাতৃভূমির এমন পরিস্থিতি আর কেউ কখনো দেখেনি৷ ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে প্রায় ৬ কোটির মত মানুষ রয়েছে যারা অসহায়, গরীব দুঃস্থ। দিনে ১ বেলা খাবার জোটাতে যাদের হিমশিম খেতে হয়। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তারাই আজ সবচাইতে বেশি বিপদে। নেই কোনো আয়, রোজগার, তাই পেটেও নেই খাবার। এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। তারই অংশ হিসেবে অসহায় দুস্থ ও গরীব লোকদের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যমান মনে হচ্ছে।’
কাউন্সিলর কাদের সম্পূর্ণ নিজের অর্থায়নে ইতিমধ্যে প্রায় ২০০০ পরিবারকে এাণ সামগ্রী ২৮নং দক্ষিণ পাঠানটুলি ওয়ার্ড এলাকার সাধারণ জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তিনি নিজস্ব অর্থায়নে আরও ১২০০ অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও তিনি সরকারীভাবে ৯ ভাগে যথাক্রমে ৪৮৮ ব্যাগ, ৩৮৫ব্যাগ, ৩৮৪ব্যাগ, ৭২৭ব্যাগ, ১০৯১ব্যাগ, ১৮২ব্যাগ, ৭২৭ ব্যাগ, ৩৬৪ব্যাগ, ৩৬৪ব্যাগ করে মোট ৩৯৮৫ব্যাগ ত্রাণ সামগ্রী ৩৯৮৫ অসহায় দুস্থ, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে বিতরণ করেন।
কাউন্সিলর আবদুল কাদের শুধু খেটে খাওয়া দিন মজুরই নয় এবার তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন সে সব মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে যারা সরকারি ত্রাণের জন্য চক্ষু লজ্জায় দাঁড়াতে পারেন না কারো কাছে বা কোন সরকারি ত্রাণের লাইনে। মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারেন না তাদের অভাব অনটনের কথা। তাই কাউন্সিলর কাদের রাতের আঁধারে নিজে সে সব মানুষের খোঁজ খবর নিয়ে এসে পরে লোক চক্ষুর আড়ালে সে সব মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী বা কখনো নগদ অর্থ বিতরণ করে যাচ্ছেন। তার এই মহান কর্মযজ্ঞের পরেও কোথাও নেই তাঁর ত্রাণ বিতরণ কালে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো কোন ফটোসেশান এর ছবি। নেই কোন পত্রিকা অথবা টিভি মিডায়ার সামনে নিজেকে দানবীর সাজানোর নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা। অত্যন্ত নিভৃতে থেকে কি করে সত্যিকারের জনসেবা করতে হয় কাউন্সিলর আবদুল কাদের যেন তারই জীবন্ত উদাহরণ। মধ্য মার্চ থেকে চলছে তার নিরব ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি শ্রমহীন এবং শ্রমজীবী কর্মহীন মানুষের জন্য। গত কয়েকদিন আগে থেকে শুরু করেছেন নিন্মবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে তাঁর ত্রাণ বিতরণের এক মহতি কার্যক্রম। শুধু তাই নয় তিনি মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, হিন্দু সম্প্রদায় ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের জন্যও ইতিমধ্যে উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছেন। এবং তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে,তার এই ত্রাণ কার্যক্রম চলতেই থাকবে যতো দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীল পর্যায় না পৌঁছায়। তিনি বলেন, আমার এই সাহায্য সহযোগিতা থাকবে সবার জন্য উমুক্ত। কোন দল, গোষ্ঠী নয় মানুষের জন্যই আমার এই সামান্য প্রচেষ্টা। যদি মানুষের সেবা করার মাধ্যমে তাদের মূখে একটু হাসি ফোটাতে পারি এটাই হবে আমার পাওনা। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া দক্ষিণ পাঠানটুলি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, যেখানে সারা বাংলাদেশের সরকারি ত্রাণ চুরি করছে সরকারি ভাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত চেয়ারম্যান,মেম্বাররা সহ ত্রাণ কর্মসূচির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা , ঠিক সেখানেই কাউন্সিলর আবদুল কাদেরের মতো মানুষগুলো ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারি বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী সঠিক এবং সততার সাথে ওর্য়াডের প্রতিটি পাড়া, মহল্লায় কমিটি গঠনের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে এবং চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সত্যিকারের সেবা দান কর্মকান্ড। তাও আবার কোন রকম ব্যাক্তিগত প্রচার প্রচারণা ছাড়া। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন এই সকল দানবীর এবং সৎ জনপ্রতিনিধিদেরকে কবুল করে আরও বেশী বেশী অসহায়দের পাশে থাকতে পারে মতো তওফীক দান করুক এই দোয়াই করি।