স্টাফ রিপোর্টারঃ
সীতাকুণ্ডে তিনদিন ব্যাপী শিবচতুর্দশী মেলায় চন্দ্রনাথ ধামে তীর্থ যাত্রীদের ঢল নেমেছে। গত দুদিনে প্রায় ২০ লাখ ভক্তের সমাগম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মহাতীর্থের অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভিড় দেখা গেছে। প্রচণ্ড ভিড়ে গত দুই দিনে অন্তত ৭ শতাধিক পুণ্যার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বিভিন্নভাবে টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান সরঞ্জাম খুইয়েছেন অনেক পুণ্যার্থী। এদিকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চার পকেটমারকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- শঙ্কর বিশ্বাস, রনি, ফাহিম ও জাকারিয়া রাসেল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবচতুর্দশী শুরু হয়েছে সোমবার রাত ২টা ৫০ মিনিটে। মঙ্গলবার (১ মার্চ) পুরোদিন শেষে রাত ১টা ৭ মিনিট পর্যন্ত এ তিথি ছিল। এ কারণে পূজা-অর্চনা করে পুণ্যলাভের জন্য গত দুদিনে এই তীর্থে ছুটে আসেন পুণ্যার্থীরা।
এদিকে মঙ্গলবার সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম ঘুরে দেখা গেছে, ১২শ’ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির পর্যন্ত তীর্থ ভূমির সর্বত্র লোকে লোকারণ্য। এছাড়া লাখ লাখ ভক্ত দর্শন করেছেন এই তীর্থের ছোট দারোগারহাট লবণাক্ষ ও বাড়বকুণ্ড বাড়বানল।
ঢাকা ধামরাইল থেকে আসা ময়না মণ্ডল বলেন, আমার দুটি মোবাইল নিয়ে চলে গেছে পকেটমার। আমি বিষয়টি মেলা কমিটির অস্থায়ী কার্য়ালয়ে থাকা পুলিশকে অবহিত করেছি। টাঙ্গাইল থেকে তীর্থ দর্শনে আসা শুকলাল সাহা বলেন, আমরা এক সাথে বাসে করে ৪৭ জন মানুষ তীর্থ দর্শনে এসেছি।
সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে অত্যাধিক ভিড়ে স্বয়ম্ভুনাথ এলাকায় আমার পকেট থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। বিষয়টি আমি পুলিশকে জানিয়েছি।
সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাধ ধাম মেলা কার্যকরী কমিটির সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সীতাকুণ্ড শিবচতুর্দশী এ মেলায় প্রতিবছর ১৫-২০ লাখ ভক্তের আগমন ঘটে। এবার করোনার প্রভাব কম থাকায় বিপুল ভক্তের সমাগম হয়েছে। পৌরসদর থেকে পাহাড় চূড়া পর্যন্ত কোথাও তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। মানুষ আর মানুষ।
তিনি বলেন, শুধুই সোমবার ৮-১০ লাখ ভক্তের আগমন হয়েছে। মঙ্গলবার সেই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সে হিসেবে ২০ লক্ষাধিক ভক্তের আগমন হয়েছে এবার। এই ভিড়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেও বড় ধরণের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে প্রবল ভিড় হলেও কষ্টে এই তীর্থ দর্শন করেও খুশি ভক্তরা।
ভিড়ের মধ্যে ৪-৫ কি.মি. পথ বেয়ে পাহাড়ে উঠে একে একে স্বয়ম্ভুনাথ, বীরুপাক্ষ ও চন্দ্রনাথ দর্শন করেছেন ঢাকা থেকে আসা অঞ্জলি দাশ। তিনি বলেন, ৮ ঘণ্টা চেষ্টার পর চন্দ্রনাথ দর্শন করে অনেক শান্তি পেলাম। এদিন ভক্তদের ‘বোম-ভোলা’ ধ্বনিতে মুখরিত ছিল এই তীর্থভূমি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়া সাত শতাধিক পুণ্যার্থীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়তই কেউ না কেউ চিকিৎসা নিতে আসছে এখানে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশাল এ মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাটা কঠিন হলেও আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় আমাদের চার শতাধিক পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী মিলে সেই কঠিন কাজটি আমরা করে চলেছি। আজ চারজন পকেটমারকে আমরা আটক করেছি।
সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী বলেন, বুধবার মেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে। মেলাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সরকারের প্রতিটি দপ্তর সহযোগিতা করছে বলেই ২০ লক্ষাধিক মানুষের মেলাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের পথে।