মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লবণের পানিতে মৃত্যুপুরীতে পরিণত পটিয়ার ইন্দ্রপুল বাইপাস এলাকা


প্রকাশের সময় :২০ মার্চ, ২০২৪ ৯:১৮ : অপরাহ্ণ

পটিয়া প্রতিনিধি:

লবণের পানিতে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া ইন্দ্রপুল বাইপাস এলাকা। লবণবাহী ট্রাক থেকে ঝরে পড়া ক্ষারযুক্ত পিচ্ছিল পানির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত এক বছরে এ এলাকায় শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত হয়েছে কয়েক শতাধিক। যাদের বেশিরভাগই ছিল মোটরসাইকেল আরোহী।

পটিয়ার ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকায় রয়েছে শতাধিক লবণ কারখানা। সেখানে প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে শতশত ট্রাক করে আসা অপরিশোধিত লবণ আনলোড করা হয়। বেশিভাগ লোড-আনলোডের কাজ চলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর। পানিযুক্ত অপরিশোধিত লবণের ক্ষারযুক্ত ঝরে পড়া পানি পিচ্ছিল ও স্যাঁতস্যাঁতে করে তুলছে ইন্দ্রপুল এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার মহাসড়ক। ফলে সড়কের চলাচলকারী যানবাহনগুলো প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ রাতে চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামের অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম ফিরছিলেন শহর থেকে নিজ বাড়িতে। পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় আসলে কক্সবাজার থেকে ফেরা একটি ভ্রমণ বাস লবণের পানিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মফিজুলের মোটরসাইকেলকে জোড়ে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মফিজুল প্রাণ হারান।

একই বছর এপ্রিল ১৭ তারিখ রাতে সালাউদ্দিন ও করিম নামের দুই বন্ধু মোটরসাইকেল করে যাচ্ছিলেন বিয়ের দাওয়াতে। মাজার গেইট এলাকায় লবণের পানি পড়ে রাস্তা এমন ভাবে পিচ্ছিল হয়েছে তাদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে। যার কারণেই ঘটনাস্থলে সালাউদ্দিন মারা যান। তার অপর বন্ধু করিমও গুরুতর আহত হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পটিয়া থানার এএসআই জাফর চট্টগ্রামে কাজ সেরে বাইক নিয়ে আসছিলেন গন্তব্য স্থল পটিয়ায়। পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় আসলে লবণের পানিতে বাইক পড়ে যায় রাস্তায়। তিনি গুরুতর আহত হন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে।

চলতি মার্চের ৭ তারিখ রাতে সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী সোহানা পারভিনকে নিয়ে মোটরসাইকেল করে চট্টগ্রাম শহর থেকে ফিরছিলেন আবছার নামের এক যুবক। ইন্দ্রপুলের পাশে আশরাফ আলীর শাহ এর মাজারের পাশে আসলে তার মোটরসাইকেলের ব্রেক কষতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুইজনই রাস্তা থেকে ছিটকে পরে গুরুতর আহত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, দিনের বেলায় সামান্য পরিমাণ লবণবাহী ট্রাক চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর সারি সারি লবণের ট্রাক চলাচল করে এ সড়কে। এ সময় লবণ পানি আর ধুলোয় জমাট বাধা আস্তরণ তেলতেলে হয়ে উঠে। চলাচলকারী যানবাহন প্রয়োজনের সময় ব্রেক কষলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। সন্ধ্যার পর পর থেকে ভোর পর্যন্ত লবণ গাড়ির আধিপত্য চোখে পড়ে ইন্দ্রপুল এলাকা ও বাইপাস সড়কে। এছাড়াও লাইটিং স্বল্পতা, গতিরোধক না থাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান সড়কের পটিয়া পয়েন্ট এলাকায় বিশেষ করে বাদামতল থেকে ভাইয়ের দীঘির পাড় পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। এতে নিহতের পাশাপাশি আহতও হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে শত শত যাত্রীদের।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সজীব বলেন, সড়ক পথে লবণ পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রাকের নিচে তেরপাল বা মোটা পলিথিন বিছিয়ে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। যাতে করে লবণের ক্ষারযুক্ত পানি সড়কে না পড়ে। কিন্তু লবণ ব্যবসায়ী ও ট্রাক চালকরা এসব নিয়মনীতির প্রতি তোয়াক্কা না করে ঝুঁকি পূর্ণভাবে লবণ পরিবহন করে যাচ্ছে। ফলে লবণের ক্ষারযুক্ত পিচ্ছিল পানির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, চকরিয়া, বাঁশখালী, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উৎপাদিত এসব লবণ প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণের পটিয়ার ইন্দ্রপুলসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়ে যেতে হয়। আগে লবণ পরিবহনের জন্য সাগর ও নদী পথকে ব্যবহার করা হত। এখন অধিকাংশ লবণ পরিবহন হয় সড়ক পথে।

আহত ও নিহত পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অপরিশোধিত লবণ থেকে ঝরে পড়া পানিতে প্রতিনিয়ত এত দুর্ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে প্রশাসন থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়াও বেপরোয়া বাস চালকদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়া, সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর্যপরী বাস্তবায়ন না হওয়া, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গতিরোধক না থাকাকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও খোলা লবণ বোঝায় ট্রাক নিয়ে ইন্দ্রপুল আসা গাড়ির চালক মফিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই খোলা লবণ বোঝায় ট্রাক নিয়ে এইখানে আসতেছে আমি ও আসছি। আমাদের কখনো কেউ নিষেধ করেননি।

শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে কখন কি হয় তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ।

তিনি বলেন, পিচ্ছিল হওয়া ছাড়াও লবণ পানি পড়ে মহাসড়কের কার্পেটিং ওঠে যাচ্ছে। পানি ঢুকে সড়কের বিটুমিনাসের নিচের স্তর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো সড়কের আয়ুষ্কালও কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন জানানো হলেও তারা দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয় না। তিনি উপজেলার নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এসব রোধ করার প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের সভায় তুলে ধরা হবে বলে জানান।

অন্যদিকে পটিয়ার বিপদজনক এলাকায় গতিরোধক ও ডিভাইডার এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গতিরোধক ও ডিভাইডারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পারব।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য লবণ পানি মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

ট্যাগ :