এম.এইচ মুরাদঃ
রাজধানী ঢাকায় গুলশানের অভিজাত একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে আত্নহত্যা প্ররোচনায় অভিযোগ ও মামলা হলেও কোন এক অজানা কারণে এবং নাটকীয়ভাবে হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের নাম আলোচনায় নিয়ে এসেছে একটি সার্থনেষী ও কুচক্রী মহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হুইপপুত্র শারুনের সঙ্গে মারা যাওয়া মুনিয়ার কিছু ভুয়া ও ভিত্তিহীন কথোপকথনের স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে মূলত আলোচনা ও সমালোচনায় মেতেছে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ।
তবে এসব স্কিনশটকে ভুয়া এডিট করে বানানো ও মনগড়া দাবি করে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক হুইপ পুত্র শারুন বলেন,’মুনিয়ার মৃত্যু রহস্যটি ভিন্নখাতে নিতেই আসামি পক্ষ এখন নতুন খেলায় নেমেছে। এর আগেও বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়েছিল। যেসব ভুয়া স্কিনসট ভাইরাল করা হচ্ছে সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হোক। এমনকি তাকে এ পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি বলে জানান আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটির এ সদস্য।’
অন্যদিকে একটি জাতীয় পত্রিকায় শারুনকে মুনিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করলেও কারা জানতে চেয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়নি। এ বিষয়ে শারুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল হঠাৎ করে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে আমার কাছে মুনিয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি তাদের যা যা জানি তা জানিয়েছি। এখানে কোনও বিশেষ সূত্র বা আইন-শৃঙখলা বাহিনীর প্রশ্ন আসবে কেন? আপনি জানতে চাইছেন আপনাকেও তো বলছি।’
শারুন আরও জানান, মুনিয়ার সঙ্গে তাঁর সরাসরি পরিচয় ছিল না। গত বছর ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে মুনিয়া তাকে জানিয়েছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে তাঁর সাবেক স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল। এসব ছাড়া তার সঙ্গে তেমন কোনও কথাবার্তা হয়নি। মুনিরার সাথে শারুনের তেমন কোনও যোগাযোগ ছিল কিনা সেটা তার কল লিস্ট ও মোবাইল ফরেনসিক পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তরুণ এ ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা।
কেন এই ঘটনায় তাকে জড়ানোর কথা উঠছে তা জানতে চাইলে হুইপপুত্র শারুন বলেন, ‘বসুন্ধরার এমডি আনভীরের সাথে আমার সাবেক স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল। এসব নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল। পরে আমাদের সংসারও ভেঙে যায়। এরই প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওই গ্রুপের সব মিডিয়াকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপ্রপ্রচারে নেমেছিল। এখন নতুন করে তারা সেই খেলায় মেতে উঠেছে। মুনিয়ার ঘটনায় আসামি নিজেকে আড়াল করে আমাকে জড়াতে চাচ্ছে।’
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে ২২ বছর বয়সী তরুণী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবার বাদ আসর কুমিল্লা নগরীর টমসমব্রিজ কবরস্থানে মুনিয়ার দাফন সম্পন্ন করা হয়। ওই দিন রাতেই মোসরাতের বড় বোন নুসরাত বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সায়েম সোবহানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। প্রতিমাসে এক লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে সায়েম সোবহান তাকে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। নিয়মিত ওই বাসায় সায়েম যাতায়াত করতো। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতো।
মুনিয়ার বোন অভিযোগ করেছেন, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। একটি ছবি ফেসবুকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সায়েম সোবহান তার বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তাদের মনে হচ্ছে, মুনিয়া আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এর বিচার চান তারা। গতকাল আদালত আনভীরের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
ডিএমিপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী গণমাধ্যমেকে বলেন, ‘ওই ফ্ল্যাটে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াত ছিল। কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। এমনকি এখন এটা বলা যাচ্ছে না— তা কি আত্মহত্যা নাকি হত্যা। সব বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।’
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আজ বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ। কারও অপরাধ থাকলে তাঁর শাস্তি হবে।’
গুলশান দুই নম্বর এভিনিউয়ের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি-৩ ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন মুনিয়া। চলতি বছরের মার্চ মাসে এক লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় তিনি ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। মুনিয়া মিরপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার নাম মৃত শফিকুর রহমান। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের দক্ষিণপাড়া উজির দিঘি এলাকায়।