এম.এইচ মুরাদঃ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেই ওঠে এসেছে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী দরগাহ শরীফের আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুদক কমিশন। যাতে এ চারজনের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়। এদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান দুদক সূত্র।
অভিযুক্তরা হলেন : দরগার শরীফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, জে এম জি হোল্ডিং এস্টেট এন্ড ডেভেলপার কোম্পানীর অংশিদার রফিকুল ইসলাম, ইয়াজ্জেম হোসনে রোমেন ও মো. হারুনুর রশিদ।
দুদক জানায়, ২০১৮ সালে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. হুসাইন শরীফ অনুসন্ধান শেষে ২০২০ সালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণ পাওয়ায় মামলা সুপারিশ করে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেন। এরমধ্যে গত ২৪ জুলাইয়ে কমিশন মামলার অনুমতি দেন।
দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, ডেভেলপারের মাধ্যমে বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের মসজিদ সংস্কার করতে ২০০৭ সালের ১২ নভেম্বর ওয়াকফ প্রশাসকের নিকট অনুমোদন চায় তৎকালীন কমিটি। পরবর্তীতে ওয়াকফ প্রশাসক ১১টি শর্ত দিয়ে ২০০৯ সালের ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমোদিত প্ল্যান ও ডিজাইন অনুযায়ী মসজিদ সম্প্রসারণ ও বহুতল বানিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। যদিও অনুমোদন দেয়ার আগেই ২০০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারিতে দরগাহ শরীফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসমাল চৌধুরী ও জে এম জি হোল্ডিংয়ের চেয়ারম্যান মাকছুদুর রাহমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন করেন। চুক্তিপত্রে ডেভেলপার কোম্পানি ২১ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে তাতে দোকান বরাদ্দ দিয়ে টাকা কোম্পানি নিজেই গ্রহণ করবে।
বিনিময়ে ডেভেলপার কোম্পানি ৯ হাজার ৮০০ বর্গফুট ৪ তলা ভিত্তি দিয়ে দোতলা মসজিদ নির্মাণ করে দেবে বলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ করে। অথচ ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমোদনের শর্তে বলা হয়, “ওয়াকফ এস্টেটের নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদ সম্প্রসারণ এবং বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে”। ২নং শর্তে উল্লেখ আছে “ওয়াকফ সম্পত্তি কোন ব্যাংক কিংবা কোন অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট বা ব্যক্তির নিকট দায়বদ্ধ রাখা যাবে না”। ৬নং শর্তে উল্লেখ আছে “কোন অবস্থাতেই ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিত নির্মিত ভবনের কোন দোকান কিংবা ওয়াকফ সম্পত্তির কোন অংশ দীর্ঘমেয়াদী পজেশন হস্তান্তর কিংবা মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তর করা যাবে না”। কিন্তু বিপরীতে দরগাহ’র সাধারণ সম্পাদক ও ডেভেলপার কোম্পানীর যে চুক্তি করা হয়, তার বেশি অংশই ভঙ্গ করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও ওঠে আসে, চুক্তির পরপরই বাণিজ্যিক ভবনের দোকান বিক্রয়ের জন্য লিফফেটসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করে ডেভেলপার কোম্পানি। একই সাথে দরগাহ সংলগ্ন একটি অফিস স্থাপন করে দোকান বরাদ্দ দেয়া শুরু করে। এরমধ্যেই ৪৬ জন ব্যক্তির নামে ২০ লাখ টাকা দরে ৫০টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। যারমধ্যে কিস্তি হিসেবে প্রথমেই ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করে কোম্পানিটি। সেই হিসেবে এ ৪৬ জনের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করা হয়। গতকাল সোমবার দুদক সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিয়মকানুন ছাড়াই চুক্তি হয়। এছাড়া টাকাগুলোও কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়নি। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।