এম.এইচ মুরাদ:
চট্টগ্রামে বিকল্প পানি চলাচলের ব্যবস্থা না করে ড্রেন ও খালে বাঁধ নির্মাণ করার মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করায় ভোগান্তিতে পড়েছে বাকলিয়া ও পূর্ব ষোলশহর এলাকার হাজারো মানুষ। রির্টার্নিং ওয়াল নির্মাণের জন্য খালে দেওয়া অস্থায়ী বাঁধে জমছে পানি। ড্রেনের নোংরা পানিতে ডুবছে নগরের রাস্তা থেকে অলিগলি এবং বাসাবাড়ি। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছে অত্র এলাকায় বসবাস করা হাজারো মানুষ।
বাঁধের কারণে বিভিন্ন এলাকার ড্রেনের পানি যেতে পারছে না খালে। এতে নোংরা পানিতে ডুবছে রাস্তা, অলিগলি ও নিচতলার বাসা-বাড়ি। পানি উঠলে নামছে না সহজে। জমে থাকছে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে। এতে দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে বাকলিয়া ডিসি রোডসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের। কাজ শুরু হওয়ার আগে পানি চলাচলের বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই রকম নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না মনে করছেন অনেকে।
সরেজমিন নগরের চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া ও পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভোগান্তির এ চিত্র।
এদিকে খালে দেওয়া বাঁধের কারণে এবং বিকল্প কোন পানি চলাচলের ব্যবস্থা না থাকার কারণে এলাকার রাস্তা ও অলিগলিতে পানি জমে থাকছে বলছেন খোদ চসিক ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামও।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনভোগান্তি লাঘবে তারা কাজ করছেন। অভিযোগ পেলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। চলতি বছরেই চাক্তাই খাল ছাড়া অন্যান্য খালের কাজ শেষ করার আশা করা হচ্ছে।
এদিকে নগরের পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় হাঁটুর নিচে জমে আছে নোংরা পানি। সেই পানি ছড়িয়ে গেছে গনি কলোনির আগে থেকে কাউন্সিলরের বাসার সামনে পর্যন্ত। নোংরা পানি থেকে বাঁচতে অনেকেই ১০ থেকে ২০ টাকা দিয়ে রিকশা করে পার হচ্ছেন। বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ইদ্রিস কলোনীর আশেপাশের বাসিন্দারা।
আবার অনেকে নোংরা পানিতেই হেঁটে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে। পানি থেকে বের হচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। আশপাশের এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতেও জমে আছে পানি। অপরদিকে চকবাজার ধুনীরপুল সংলগ্ন সংযুক্ত চাক্তাই খালে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণকাজ চলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধুনীপুল সংলগ্ন খালে বাঁধ তৈরি ও পানি যাওয়ার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করার কারণে প্রতিদিন রাস্তা ও অলিগলিতে পানি জমে থাকছে। ফলে দিন দিন জনভোগান্তি বাড়ছে। এসব দেখারও কেউ নেই।
দোকানিরা জানান, প্রায় দুসপ্তাহ ধরে পানি জমে আছে রাস্তায়। চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। ধুনীরপুল সংলগ্ন চাক্তাই খালে বাঁধ দিয়ে কাজ করার কারণেই এ ভোগান্তি। এছাড়া প্রতিদিন জোয়ারে পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তা।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাংকার সজিব কুমার দে বলেন, দুর্গন্ধ ও ময়লা পানিতেই প্রায় কয়েক সপ্তাহ ধরে যাওয়া-আসা করছি। সকালে অফিসে যেতে এবং বাসায় আসতে বিরক্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। নিজের গাড়ি অন্যের বাসায় রেখে বাড়তি রিকশা ভাড়া দিয়ে বাসায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। কবে যে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে কে জানে! কাউন্সিলর সাহেবকে অভিযোগ করেও এর সুফল পাচ্ছি না। অতিদ্রুত আমরা এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই।’
দোকানি আবদুর রাজ্জাক বলেন, পানি জমে থাকার দোকানে বেচাবিক্রি কমে গেছে। ক্রেতারা কেউ আসছে না। কখন যে দোকানে পানি ঢুকে পড়ে এই চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যদি দোকানে পানি ঢুকে মালপত্র নষ্ট হয়ে যায় তাহলে অনেক টাকার ক্ষতির মুখে পড়ব। যা কাটিয়ে উঠা আর সম্ভব নাও হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শহিদুল আলম প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে খালে দেওয়া বাঁধ এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে পানি জমে থাকার অন্যতম কারণ। তাই বিভিন্ন এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করা হলেও এলাকাবাসী সুফল পাচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত খালে বাঁধ থাকবে ততদিন পানি জমে থাকার দুর্ভোগ থাকবে বলে মনে হয়। এতে আমাদের সিটি কর্পোরেশনের কোন দায়িত্বে নেই, এটি সিডিএর কাজ। সিডিএ এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। যদি খালের মুখে জমে থাকা পানিগুলো পাম্পিং করে বের করে দেওয়া যায় তাহলে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে বলে আমি মনে করি। আমরা দুয়েকদিনের মধ্যেই সিডিএ’র সাথে সমন্বয় করে পাম্পের মাধ্যমে বা অন্য কোন বিকল্প পদ্ধতিতে পানি অপসারণের চেষ্টা করবো।’
এদিকে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ওমর আলী মাতব্বর লেইনে কয়েকটি অলিগলিতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। লক্ষ্মীর মাঝির বাড়ির গলিতে পানি জমে আছে সপ্তাহের বেশি সময়। ড্রেন পরিষ্কার করেও মিলছে না সুফল। কারণ খালে পানি যেতে পারছে না। এছাড়া পাশের কয়েকটি গলিতেও দেখা গেছে একই চিত্র।
এলাকার বাসিন্দা ও দোকানিরা জানান, খালে বাঁধের কারণে বিভিন্ন এলাকার ড্রেনের পানি চলাচল বন্ধ। ফলে জোয়ার ছাড়াও তলিয়ে যাচ্ছে নিচু এলাকার রাস্তা ও অলিগলি। জোয়ার এলে পানির উচ্চতা আরও বাড়ে। তখন হেঁটে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন এলাকার মানুষ ১০-২০ টাকা দিয়ে রিকশা করে পার হচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দা মো. আরমান বলেন, খালের বাঁধ দিয়ে কাজ করার পর থেকে এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে প্রায় প্রতিদিন পানি জমে থাকছে। লক্ষ্মী মাঝির বাড়ির গলিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানি জমে আছে। কাউন্সিলর মহোদয়কে জানানোর পর তিনি ড্রেন পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও পানি নামছে না।
যোগাযোগ করা হলে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে আমার ওয়ার্ডে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই জলবদ্ধতা সমস্যাটি। যদি কাজের শুরুতে ড্রেন বা খালের পানি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হতো তাহলে এই সমস্যাটি হতো না। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে বির্জা খালে দেওয়া বাঁধ এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে পানি জমে থাকার অন্যতম কারণ। তাই বিভিন্ন এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করা হলেও এলাকাবাসী সুফল পাচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত খালে বাঁধ থাকবে ততদিন পানি জমে থাকার দুর্ভোগ থাকবে। যদি খালের মুখে জমে থাকা পানিগুলো পাম্পিং করে বের করে দেওয়া যায় তাহলে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। বাসা-বাড়ির পানিগুলো ড্রেনের মাধ্যমে খালে যায়। এখন বাঁধের কারণে পানিগুলো স্বাভাবিকভাবে যেতে পারছে না। ফলে নিচু এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এই বিষয়টি আমি সিডিএ’র বোর্ড সভায়ও তুলে ধরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের ওমর আলী মাতব্বর লেইনের বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ও নিচতলার বাসা-বাড়িতে পানি জমে আছে দীর্ঘদিন। মানুষকে জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। মেয়র মহোদয় ও সিডিএ চেয়ারম্যানকে সমস্যার বিষয়ে অবহিত করেছি। ওনারা আমাকে আস্বস্ত করেছেন এবং অতি দ্রুততম সময়ে জলবদ্ধতার সমস্যা সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ।’