স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের যানজট ও জনভোগান্তি নিরসনে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ৩২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। তবে ডিজাইনে ত্রুটি ও সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়ার কারণে নতুন করে ডিজাইান পরিবর্তন ও নতুন কিছু অঙ্গ যোগ করায় বাজেট ও সময় বাড়াতে হচ্ছে প্রকল্পটির। এখন ১০৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে এক্সপ্রেসওয়ের। পাশাপাশি সময় বাড়ছে আরও দুই বছর। তবে নতুন কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনায় জনগণ আগের তুলনায় আরও বেশি সুফল পাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে চট্টগ্রামের চিত্র বদলে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
প্রকল্পটির বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথমে যখন শুরু হয়, সেভাবে যদি থাকত, তাহলে তেমন একটা কাজে আসত না। তবে বর্তমানে সিডিএ ডিজাইনের কিছুটা সংশোধন করে অনেক জায়গায় মূল সড়কের সঙ্গে র্যাম্প দিয়ে সংযোগ করছে। এখন এটা জনগণের কাজে লাগবে। কারণ সব এলাকার মানুষের সঙ্গে যখন এটার কনেকশন তৈরি হবে, তখন এটার সুফল সার্বিকভাবে চট্টগ্রামবাসী পাবে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একনেকে অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। তাই প্রকল্পটির কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়াতে হয়। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণে অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশাসংক্রান্ত আপত্তি ও বিকল্প সড়ক চালুতে সময়ক্ষেপণসহ নানা কারণে প্রকল্পটি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন জেভি এটির নির্মাণকাজ করছে। উড়ালসড়ক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা শেষে নতুন করে ব্যয় ও সময় নির্ধারণ হয়। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। এটির মূল ব্যয় ছিল তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেখান থেকে এক হাজার ৪৮ কোটি ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি মোট দুই হাজার ৩১২ কোটি ২২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা (৭১ দশমিক ১৩ শতাংশ) এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।
বর্তমানে অনুমোদিত প্রকল্পের ফ্লাইওভারের অ্যালাইনমেন্টে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। ভূমি সমতলে রাস্তার প্রশস্ততা বজায় রাখতে পিয়ারের পরিসর কমিয়ে ফ্লাইওভারের নকশা সংশোধন করা হয়েছে। কংক্রিটের গ্রেড উন্নয়ন ও অতিরিক্ত নির্মাণকাজের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি, কিছু অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং কার্যক্রম আছে যেগুলো পরিবর্তন বা যোগ না করলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সার্থকতা থাকবে না। শুরুতেই কেন এসব চিন্তা করা হয়নি এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করেছিলাম। তারা ভুল স্বীকার করেছেন। প্রকল্প তৈরির সময় এসব তাদের নজরে ছিল না। কিন্তু এসব কার্যক্রম এত গুরুত্বপূর্ণ যে বাধ্য হয়েই প্রকল্পটি সংশোধনীর সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। তবে একটি টিম গঠন করে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছিল। তারা মোট ব্যয় প্রস্তাব থেকে ১৪৩ কোটি টাকা কমিয়েছে। সেই সঙ্গে বাস্তব প্রয়োজনে প্রকল্পটি সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।’
ব্যয় ও সময় বাড়ার বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটি যখন তৈরি হয় তখন কোনো ড্রয়িং ও ডিজাইন করা হয়নি। শুধু ট্রাফিক স্টাডিসহ আনুষঙ্গিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছিল। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরই বাকি কাজ করতে হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তির কারণে পুরো অ্যালাইনমেন্ট (যে স্থান দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে যাবে) পরিবর্তন করতে হয়েছে। নতুন করে ড্রয়িং ও ডিজাইন করতে হয়। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে ইউটিলিটি স্থানান্তরের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এখানে অনেক ব্যয় বেড়ে গেছে। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণ প্রথম দিকে ১২০ কাঠা করার কথা থাকলেও এখন ৬০০ কাঠার মতো নিতে হচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।’