এম.এইচ মুরাদঃ
দেশে দিনদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার মানুষের চলাচল ও দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়ে বিধি নিষেধ জারি করেছে। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে সেই বিধি নিষেধে শৈথিল্য শুরু হয়েছে। গার্মেন্টসের পাশাপাশি নগরীতে খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানও। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও চলাচল বেড়েছে রিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন। দিনের বেলায় নেই প্রশাসনিক কড়াকড়িও। রাস্তায় বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। এতে করে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘কিছু কিছু গার্মেন্টস খুলেছে, কিছু কিছু দোকান খুলেছে। রোজা শুরু হয়েছে। এতে লোকজনের আনাগোনা কিছুটা বেড়েছে। জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে। তবে উৎকন্ঠার বিষয় হচ্ছে, আজকে (বুধবার) করোনা সংক্রমণের হারও কিছুটা বেড়েছে। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, সেটা পলিসি মেকারদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।’
জেলার কোথাও প্রশাসনিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কোন শৈথিল্যের সুযোগ নেই দাবি করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আমরা সেভাবে এগুবো। এখন আমাদের বাজার মনিটরিং চলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি জোরদার রয়েছে। এখানে শৈথিল্যের সুযোগ নেই।’
বুধবার সকাল থেকে নগরীর বেশ কয়েকটি স্পটে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর প্রায় সবখানেই লোকজনের আনাগোনা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে গাড়ির চাপও বেড়েছে। প্রাইভেট গাড়ির চলাচল বেড়েছে কয়েকগুণ। রিকশাও চলাচল করছে নগরজুড়ে। নগরীর প্রবেশমুখ নতুন ব্রিজ, কোতোয়ালী, আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট, স্টেশন রোড, মুরাদপুর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, অক্সিজেন মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, প্রবর্তক মোড় এলাকায় বিগত কয়েকদিনের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে কয়েকগুন। প্রায় সবগুলো স্পটেই অসংখ্য রিকশা। অ্যাপস ভিত্তিক মোটর সাইকেলের সংখ্যাও বেড়েছে নগরীতে। আবার সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড এর বেশিরভাগ পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। এতে প্রায় সব ধরণের পরিবহনের উপস্থিতি বেড়েছে পতেঙ্গা, হালিশহর এলাকায়। বিশেষ করে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মুদি, ওষুধ, ইফতার ও খাবারের দোকানের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দোকানও খুলতে শুরু করেছে। নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজারের কয়েকটি গলিতে কিছু দোকানে বেচাকেনাও চলছে। আবার নগরীর মোড়ে মোড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন লোকজন। কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। নগরীর জনবহুল এলাকাগুলোতে রাস্তায় রিকশাভ্যানে পণ্যের পসরা সাজাচ্ছে লোকজন।
আন্দরকিল্লা এলাকায় ইদ্রিস মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘আমার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়। রাঙ্গুনিয়ার ভোটার। পরিবার নিয়ে বাস্তুহারা এলাকায় থাকি। সেখানে আমরা কোন ত্রাণ পাইনি। রিকশা নিয়ে রাস্তাই নেমেছি। রাস্তায় অন্য সময়ের তুলনায় যাত্রী কম। তবুও রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাই। আমার মতো প্রায় সব রিকশাওয়ালা পরিবারের খাবার যোগাড়ের জন্যই পথে নেমেছে।’
জামালখান এলাকায় রিকশা ভ্যানে মৌসুমী ফল বিক্রি করছিলেন আলাউদ্দিন হোসেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দিনের বেলায় স্টেশন রোডের আড়ত থেকে আনারস, বেল, তরমুজ নিয়ে এসেছি। একেকদিন একেক ফল আনি। করোনার কারণে আগের তুলনায় রাস্তায় মানুষ থাকে না। তবে রোজা শুরুর পর থেকে রাস্তায় মানুষ বাড়ছে। বেচাকেনাও বাড়ছে।’
সিরাজদ্দৌলা রোড এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রনজিত মিত্র বলেন, ‘দিন বাড়ার সাথে সাথে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ি সবচেয়ে বেশি। তবে দিনের বেলা মানুষের কোলাহল বাড়লেও সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং রাস্তাঘাটে গাড়ি থাকে না। কোথাও নিয়মমাফিক সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। গত দুইদিন ধরে দিনের বেলা রাস্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনীর তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না।’
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, কিছু কিছু কর্মকাণ্ড সরকার অ্যালাউ করছে। যেমন কিছু কিছু গার্মেন্টস খুলেছে। এতে শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য কিছু গাড়ি চলার সুযোগ দিতে হচ্ছে। এটাকে শৈথিল্য বলা যাবে না।’ নাগরিক জীবনে শৈথিল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু রিকশা চলাচল করছে। মানুষের রুটি-রুজির বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। তারপরেও চেষ্টা করছি। কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। প্রতিদিন একশ’র মতো প্রাইভেট গাড়ি পুলিশ আটক করছে। প্রত্যেকের কিছু যুক্তি আছে। গার্মেন্টস মালিক ও কর্মকর্তারা গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন। কেউ ডাক্তার, কেউ ব্যাংকে যাচ্ছেন। যুক্তির অভাব নেই। তারপরেও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন ছাড় দিচ্ছি না।’